ঢাকা | মার্চ ২৩, ২০২৫ - ১১:৫১ অপরাহ্ন

প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন

  • আপডেট: Saturday, March 22, 2025 - 11:13 pm

সোনালী ডেস্ক:

* ওয়ান হাউজ, ওয়ান মিডিয়া

* সাংবাদিকের যোগ্যতা হবে স্নাতক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। প্রতিবেদনে একই ব্যক্তির হাতে একাধিক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা থাকতে পারবে না মর্মে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও সাংবাদিকতায় প্রবেশে ন্যূনতম বেতন বিসিএস নবম গ্রেডের মতো এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করার সুপারিশ করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, মিডিয়া কমিশন গঠন, অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য বন্ধে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্যাক্ট চেকিং ডেস্ক চালুসহ ২০ দফা সুপারিশ জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে কমিশন সদস্যরা রিপোর্ট জমা দেয়ার পর তাদের সাথে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনি বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো অবিলম্বে কার্যকর করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নেবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করতে গত বছরের নভেম্বরে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়।

ওয়ান হাউজ, ওয়ান মিডিয়া: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার শুরুতেই বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যমের মালিকানার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং একক মালিকানা ও একাধিক গণমাধ্যমের মালিকানা অর্জনের বিষয়গুলোতেও সংস্কার শুরু হয়েছে সারা বিশ্বে।

যে কারণে বাংলাদেশেও গণমাধ্যমেও মালিকানা বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কালো টাকা ঢুকেছে। মালিকানা সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিগত সময়ে উম্মুক্তভাবে গণমাধ্যমের লাইসেন্স না দিয়ে দেয়া হয়েছে নেপথ্যে, যোগসাজশে, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক ব্যক্তির মালিকানায় টিভি ও পত্রিকা থাকা বা ক্রস ওনারশিপ দেয়া হয় না বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, একক ওনারশিপ থাকলে সেটা ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়, পরিবার ও গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার একটা উপায় হচ্ছে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানি করা। যে কারণে এই ‘ক্রস ওনারশিপ’-এর বদলে একজন ব্যক্তির নামে একটি মিডিয়ার লাইসেন্স দেয়ার কথা জানানো হয়েছে সুপারিশে।

যোগ্যতা স্নাতক, বিসিএস স্কেলে বেতন: প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশন যে সুপারিশমালা তুলে ধরেছে- তাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় পর্যায় কিংবা সারা দেশে রিপোর্টার বা প্রতিনিধি নিয়োগের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার সুপারিশ করা হয়েছে স্নাতক পাস। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ জানান, শুধু সাংবাদিক নয়, সম্পাদক ও প্রকাশকের যোগ্যতা কী হবে, সেই বিষয়েও বলেছেন।

কমিশন বলছে, সাংবাদিকদের ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতকের পাশাপাশি একটি শর্তও যুক্ত করা হয়েছে। সেটি হলো, এক বছর শিক্ষানবিশ থাকার পরে পূর্ণ সাংবাদিকের মর্যাদা পাবেন সকল সাংবাদিকরা। এছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশপদের ন্যূনতম বেতন বিসিএস কর্মকর্তাদের মতো নবম গ্রেডে করার সুপারিশও করা হয়েছে।

সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন: সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় আইনের বিষয়গুলো নিয়েও সুপারিশ জমা দিয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ ও নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইনের এই খসড়া করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

এই আইনের আওতায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, তথ্যপ্রযুক্তি কিংবা ডিজিটাল নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনে দায়ের করা মামলাগুলো চিহ্নিত করে আগে থেকেই পর্যালোচনার সুপারিশ করা হয়েছে। পর্যালোচনায় মিথ্যা মামলার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ ও এতে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণের সুপারিশ করা হয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশে মিথ্যা কিংবা ভুয়া তথ্য রোধে প্রত্যেকটি সংবাদ মাধ্যমে একটি করে ফ্যাক্ট চেক ডেস্ক চালু করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে।

বিটিভি-বেতার ও বাসস নিয়েও সুপারিশ: বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন সরকারের সময়। কেননা অতীতে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে তারাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাসীন দল ও সরকার নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছে।

যে কারণে সংস্কার কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাবনায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে। সংস্কার কমিশন সম্প্রচার মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন এবং বেতারকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য সুপারিশ করেছে। একই সাথে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকিয়ে না রেখে বিটিভি ও বেতারের সাথে পরিচালনা করার সুপারিশও করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকার বর্তমানে যেভাবে অর্থায়ন করছে ঠিক একইভাবে নতুন প্রতিষ্ঠানকে অর্থায়ন করবে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা নিজস্ব আয়ের পথও বের করবে। এটি পরিচালিত হবে একটি স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্যদের মাধ্যমে। যার সম্ভাব্য নাম হতে পারে বাংলাদেশ সম্প্রচার সংস্থা বা জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা নামে। পর্ষদের চেয়ারম্যান সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত থাকবেন এবং তার বেতনভাতা পর্ষদ ঠিক করবে। আর এর সদস্যরা সভায় অংশ নেওয়ার জন্য সম্মানি পাবেন।

গণমাধ্যমে জেন্ডার-সাম্য বজায়ে সুপারিশ: সমাজে একটি জেন্ডার-সাম্যমূলক পরিবেশ তৈরির অংশ হিসেবে গণমাধ্যমে জেন্ডার-সাম্যের বিষয়টিতে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে মনে করে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। গণমাধ্যমে সবপর্যায়ে জেন্ডার-সাম্য বজায় রাখতে নারীকে কীভাবে উপস্থাপনা করা হবে, তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং নিয়মাবলি রচনা করাসহ কয়েক দফা সুপারিশ দেয়া হয়েছে।