ঢাকা | মার্চ ২৩, ২০২৫ - ১১:৪৭ অপরাহ্ন

উত্তরে পেট্রোল-ডিজেল সরবরাহ বাধাগ্রস্তের আশঙ্কা: বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না বড় জাহাজ

  • আপডেট: Saturday, March 22, 2025 - 11:47 pm

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি দীর্ঘ দুই যুগেও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়নি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রাম-বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে চাহিদা অনুযায়ী পানি থাকে না। ফলে এ রুটে বড়-বড় পণ্যবাহী ও রাসায়নিক সারবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করতে পারে না।

অন্যদিকে ছোট-ছোট লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে হয় বলে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরটি ক্রমশ অচল হয়ে পড়েছে। এ অচলাবস্থা নিরসনে উদ্যোগ না থাকায় এ বছর সেচ মৌসুমে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে আপৎকালীন ইউরিয়া সার মজুত ও পেট্রোল-ডিজেল সঠিক সময়ে সরবরাহে বিঘ্নের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, সেচ মৌসুমের জন্য উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার ১৪টি বাফার গুদামে আপৎকালীন ইউরিয়া সার মজুত ও পেট্রোল-ডিজেল কম খরচে সরবরাহের জন্য আশির দশকে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ীতে দ্বিতীয় শ্রেণির এ নৌবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে প্রায় দুই যুগ ভালোভাবে এ বন্দরটি ব্যবহার করা গেছে। এরপর গত এক যুগ ধরে নদীর তলদেশ পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ নৌ-রুটটিতে বড় পণ্যবাহী জাহাজ চলতে পারে না। এদিকে বন্দরটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় সাত/আট ফুটের ড্রাফটের বেশি গভীর ড্রেজিং করা যায় না।

ফলে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারে না। এ বন্দরটি সচল রাখতে এ রুটে ১০/১২ ফুট পানির ড্রাফট প্রয়োজন। এ পরিমাণ পানির ড্রাফট নিশ্চিত করতে বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রয়োজন। গত তিন বছর আগে এটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে বন্দরটি ক্রমশ অচল হয়ে পড়ছে। বাঘাবাড়ী বাফার গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আনসারী জানান, বর্তমানে সার আনা হচ্ছে নওয়াপাড়া বন্দর থেকে। তবে সেগুলোও সময় মতো পৌঁছায় না। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় জেলায় ১০ হাজার ২৮১ টন সারের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে মজুত আছে ৭ হাজার ৭৩৪ টন সার।

শুধু এই সার না, শুষ্ক মৌসুমে বাঘাবাড়ী বন্দরে তেল পরিবহনেও সঙ্কট তৈরি হয়। বিপিসির বাঘাবাড়ী ওয়েল ডিপোর যমুনা ওয়েল কোং-এর ব্যবস্থাপক আবুল ফজল মো. সাদেকিন বলেন, স্বাভাবিক সময়ে তেলবাহী জাহাজগুলো অন্তত ১০-১২ লাখ লিটার তেল পরিবহন করে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীপথে ঝুঁকি থাকায় তাদের ৮ থেকে ৯ লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে হচ্ছে। বড়াল নদের চ্যানেলটি ড্রেজিং করা হলে পূর্ণ লোডে জাহাজ এ বন্দরে আসতে পারবে।

বাঘাবাড়ী নৌযান লেবার অ্যাসোসিয়েশনের শাখার যুগ্ম-সম্পাদক আব্দুল ওয়াহাব মাস্টার জানান, উত্তরাঞ্চলের চাহিদার ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর দিয়ে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল, গমসহ অন্যান্য পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ নৌপথের বিভিন্ন স্থানে নাব্য-সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যে কারণে বড় জাহাজগুলো সরাসরি বাঘাবাড়ী বন্দরে ভিড়তে পারছে না।

বাঘাবাড়ী বন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডবি¬উটিএ-এর উপসহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, বাঘাবাড়ী-আরিচা নৌপথটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় এ রুটে সাত ফুট পানি ড্রাফটের জাহাজ চলাচল করতে পারবে। বর্তমান এই পথে সাড়ে ৯ ফুট পানি রয়েছে। জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কখনো কখনো বড় জাহাজে অতিরিক্ত মালপত্র নিয়ে বাঘাবাড়ী বন্দরে আসতে চান। বড় জাহাজ চলাচল করে প্রথম শ্রেণির নৌ-রুটে।

দ্বিতীয় শ্রেণির নৌ-রুটে প্রথম শ্রেণির জাহাজ আসতে পারে না। তিনি জানান, এ বন্দরটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দ্বিতীয় শ্রেণির। এই বন্দরটিকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করতে একটি মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।