ঢাকা | মার্চ ২২, ২০২৫ - ১২:৩২ পূর্বাহ্ন

কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী পার্বতীপুরের গৃহবধূ পুতুল রানী

  • আপডেট: Friday, March 21, 2025 - 4:07 pm

অনলাইন ডেস্ক : জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর  গ্রামের গৃহবধূ পুতুল রানী (৩৪) কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

তার সফলতা দেখে আশপাশের অনেকেই এই জৈব সার উৎপাদনে মনোযোগী হয়েছেন।  ওই গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন নারী উদ্যোক্তা হয়ে বাণিজ্যিক ভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন।

জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের প্রভাষ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী পুতুল রানী জানান, কেঁচো সার বিক্রি করেই তিনি সংসারের খরচ চালাচ্ছেন। তার দুই ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার ব্যয়ও বহন করছেন।

তিনি জানান, প্রতি কেজি কেঁচো সার ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা  ফুলবাড়ী ও চিরিরবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তার তৈরি কেঁচো সার কিনে নিয়ে যায়। তার উৎপাদিত কেঁচো সারের মান ভালো হওয়ায়, কৃষকেরা তাদের চাষকৃত ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করে অধিক ফলন পাচ্ছেন। ফলে তার কেঁচো সারের চাহিদা পর্যায়ক্রমে নিজ উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতেও বেড়ে চলেছে।

পুতুল রানী এখন তার কেঁচো সার তৈরিতে ৪ জন নারী কর্মীকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।   দৈনিক ২’শ ৫০ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তারা কম্পোস্ট সার তৈরির কাজে সহায়তা করেন। এতে তিনি প্রতিদিন ৮০ থেকে ১০০ কেজি কেঁচো সার  উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছেন। তার উৎপাদিত সার প্রতিদিন তার বাড়ি থেকেই কৃষকরা নগদ মুল্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

পুতুল রানী বাসসকে বলেন, ২০১৮ সালে জেলার পার্বতীপুর উপজেলার কৃষি বিভাগ থেকে কেঁচো সার ও কুইক কম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এরপর বাড়ির আঙিনায় দু’টি রিং বসিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তার কেঁচো সার তৈরীর খামারের নাম ‘বড়হরিপুর সিআইজি মহিলা ফসল সমবায় সমিতি লিমিটেড’।

তিনি জানান, প্রথমে ৩০টি কেঁচো দিয়ে উৎপাদন শুরু করলেও বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৩০ লাখের   বেশি কেঁচো রয়েছে। কেঁচো সাধারণত গোবরের মধ্যে ডিম দেয়, যা থেকে ৭ থেকে ৮ টি নতুন কেঁচো জন্মায়। প্রতিটি রিং থেকে প্রায় ৪০ কেজি সার পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে ৬০টি রিং থেকে প্রায় দু’হাজার ৫’শত কেজি থেকে ৩ হাজার কেজি কেঁচো সার উৎপাদন হচ্ছে। তার খামারে উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা আয় হয়। পাশাপাশি, প্রতি কেজি কেঁচো ৮’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়।

জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা ফয়সাল হোসেন জানান, কেঁচো সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়, পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মাটিকে নরম রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে ৮৮ দশমিক ৩২ ভাগ  জৈব পদার্থ, ১ দশমিক ৫৭ ভাগ নাইট্রোজেন, ১ দশমিক ২৬ ভাগ বোরন, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। যা উৎপাদিত ফসলের গাছের শক্তি  বৃদ্ধি ও  ফসল বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

পার্বতীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কৃষকদের রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে ফসলের জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। আধুনিক কৃষিতে মাটির গুণগত মান বাড়াতে কেঁচো সার অন্যতম বিকল্প একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে কাজ করছেন।

তিনি জানান, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি) প্রকল্পের আওতায় পুতুল রানীকে উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ১৬ টি রিং, একটি শেড, ৪ কেজি কেঁচো এবং সার তৈরির কৌশল শেখানো হয়েছে। তাকে শেখানো পদ্ধতি অনুসরণ করে সে এখন নিজেই একজন কেঁচো সার তৈরিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। তার কাছে অনেক মহিলা-পুরুষ  এখন কেঁচো সার তৈরীর পদ্ধতি শেখার জন্য যোগাযোগ করছেন। একারণে পুতুল রানী একজন সফল কেঁচো সার তৈরীর উদ্যোক্তা হিসেবে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

দিনাজপুর জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রওনক হোসেন জানান, তিনি সম্প্রতি পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর গ্রামে অবস্থিত পুতুল রানীর কেঁচো সার খামার পরিদর্শন করেন।  কেঁচো সার উৎপাদনে সফল হয়ে পুতুল রানী শুধু নিজের ভাগ্যই পরিবর্তন করেননি, তার আশ-পাশের নারীদেরও স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছেন। তার অনুপ্রেরণায় গ্রামের অনেক নারীই জৈব সার উৎপাদনে এগিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, এ সব কর্মজীবী নারীদের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সূত্র: বাসস