ইফতারে ঘোল প্রিয় পানীয়

কবীর তুহিন: রাজশাহী নগরীতে ইফতারের ঐতিহ্য টক দইয়ের সুস্বাদু ঘোল রোজাদারদের অত্যন্ত প্রিয় একটি পানীয়। ইফতার আয়োজনে রোজাদারদের প্রশান্তি মেটাচ্ছে প্রসিদ্ধ এই ঘোল। গরমের দিনে রোজাদারদের কাছে ইফতারে টক দইয়ের সুস্বাদু ঘোলের কদর বেশি।
নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় হোটেল ও রেস্তোরাঁয় এই রমজান মাসে ইফতারের জন্য এখন ঘোল পাওয়া যায়। ঘোল কিনতে আসা আকবর আমিন জানান, গরমের দিনে সাধারণত ঠান্ডা পানির সরবত দিয়ে ইফতার শুরু করি। সরবত ছাড়াও এখন গরমে রোজা হওয়ায় অনেক রোজাদার ইফতারের টেবিলে ঘোল রাখেন। পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে ইফতারে ঘোল পছন্দ করে।
নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় উত্তম ঘোষ জানান, তিনি এই স্থানে দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ ঘোল বিক্রয় করেন। সারা বছর তিনি এই স্থানে ঘোল বিক্রয় করলেও রোজার সময় তার ঘোলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আমার কাছে একটু মিষ্টি ঘোল ও একটু টক ঘোল পাওয়া যায়। রোজাদাররা দু ধরনের ঘোলই পছন্দ করলেও টক দই এর ঘোল রোজাদারদের বেশি প্রিয়। সকাল থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত আমার বেচাকেনা। প্রতিদিন আমার ১শ লিটারের ওপর ঘোল বিক্রয় হয়।
কুমারপাড়ার ঘোল বিক্রেতা জানান, দুই লিটার ঘোল তৈরি করতে এক কেজি টক দই, এক লিটার পানি, চারটি কাগজি লেবুর রস, বিট লবণ, খাওয়ার লবণ ও চিনি পরিমাণ মতো প্রয়োজন হয়। এরপর পানি আর টক দই ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পরিষ্কার সুতি কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। অন্য আরেকটি গ্লাসে সামান্য পানিতে বিট লবণ মিশিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে বিট লবণ মেশানো পানি ব্লেন্ড করা দইয়ে ঢেলে নাড়তে হবে। এরপর লেবুর রস, লবণ ও চিনি ভালোভাবে মিশিয়ে পরিষ্কার বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। ঘণ্টাখানেক পর গ্লাসে ঢেলে পরিবেশন করা যায়।
আবার দোকান থেকে টক দই কিনে বাড়িতে ঘোল তৈরি করেন অনেকে। এছাড়াও দোকানে বোতলজাত ঘোলও বিক্রি হচ্ছে। রোজার সময় নগরীর বড় মসজিদ মোড় ছাড়াও, কুমারপাড়া মোড়, আলুপট্টি মোড়, নিউমার্কেট এলাকা, শালবাগান এলাকা, উপশহর, লক্ষ্মীপুর, কোর্ট এলাকা, নওদাপাড়াসহ নগরীর প্রতিটি স্থানে ঘোল পাওয়া যায়।
শহরের প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে সাহেববাজার এলাকায় শুধু মাত্র সকালে বড় হাঁড়িতে করে ঘোল বিক্রয় করতে দেখা যেত। রোজা বাদে এখনো সকালেই নগরীর সাহেববাজার এলাকায় হাতে গণা কয়েকজন ঘোল বিক্রয় করে থাকলেও রোজার মাসে নগরীর সর্বত্র ঘোল বিক্রয় করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, অন্য দিনের তুলনায় রমজান মাসে ঘোলের মূল্য কিছুটা বেশি। নগরীর বেশির ভাগ স্থানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা লিটার দরে ঘোল বিক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা।