হতাশ পেঁয়াজ চাষিরা, আমদানি বন্ধের দাবি

উৎপাদন খরচই উঠছে না:
মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: বছরজুড়েই বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল চড়া। তাই কৃষকেরা লাভের আশায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে এবার পেঁয়াজ রোপণ করেছিলেন। সেই পেঁয়াজ এখন বাজারে উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ বাজারজাত করার আগ মুহূর্তে বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় লাভের আশায় পেঁয়াজ চাষ করে লোকসানের মুখে পড়ছেন কৃষকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারগুলোতে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৮ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৭ টাকায়। হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে ৩০ টাকা খরচ হয়েছে।
কিন্তু প্রতি কেজি পেঁয়াজের বাজারমূল্য ১৫-১৭ টাকা। এই পরিস্থিতিতে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাবেন তাঁরা। আর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবিও জানিয়েছেন কৃষকেরা। দুর্গাপুর পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ বছর বাজারে দাম ভালো ছিল পেঁয়াজের। তাই লাভের আশার ১ বিঘা ১৩ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। পেঁয়াজ ওঠানো শুরু করছি।
১ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে ৪০-৪২ হাজার টাকা খরচ হয়। এবার শুরুতে সার সঙ্কট ও তেলের দাম বাড়ায় খরচ আরও বেশি হয়েছে। কিন্তু এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম নেই। ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এ রকম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠবে না।। শানপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব বলেন, যখনই পেঁয়াজের ভরা মৌসুম তখনই সরকার বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। এতে কৃষকদের লোকসানে পড়তে হয়।
তাই বাইরে থেকে আমদানি বন্ধ না হলে পেঁয়াজের দাম আরও কমে যাবে। এতে কৃষকের ঋণের বোঝা বাড়বে। দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার সাড়ে ৩ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৩২৫ হেক্টর বেশি।
কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ ওঠানো শুরু করেছেন। মার্চের শেষে সপ্তাহের মধ্যেই কৃষকেরা জমি থেকে পেঁয়াজ ওঠানো শেষ করবেন। তারপর এসব জমিতে কৃষকেরা পাট ও ভুট্টার আবাদ করবেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার প্রায় ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে পেঁয়াজ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সাহারা খাতুন লাবনী বলেন, চাষিরা জমি থেকে পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছেন।
এখন দাম একটু কম। কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে পেঁয়াজ আমদানি বা রপ্তানি এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারবো না। এ টা কৃষি বিপণন বিভাগ বলতে পারবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহানা আখতার জাহান বলেন, আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে মন্ত্রণালয় বলতে পারবেন। এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। বাজারে দামও পড়ে গেছে।
আমরা কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় এ জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকদের ন্যায্যমূল্য কি কাজ করছেন জানতেই এই কর্মকর্তা বলেন, রাজশাহীতে আমরা পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করছি। বিভিন্ন জায়গা কাজ চলমান ও কিছু জায়গায় কাজ শেষ হয়েছে। কৃষকরা তাদের পেঁয়াজ সেখানে সংরক্ষণ করতে পারবেন।