ঢাকা | মার্চ ১৮, ২০২৫ - ১০:১৬ অপরাহ্ন

যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন: উত্তরবঙ্গে ট্রেনযাত্রায় সময় বাঁচবে ৩০ মিনিটেরও বেশি

  • আপডেট: Tuesday, March 18, 2025 - 7:15 pm

অনলাইন ডেস্ক : যমুনা নদীর ওপর নির্মিত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন সম্বলিত ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের যমুনা রেলসেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেতু উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত মি. সাইদা সিনিচি এবং জাইকার দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক মহাপরিচালক মি. ইতো তেরুয়েকি।

১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ঢাকার সাথে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মধ্যে রেলযাত্রার সময় হ্রাস করবে ৩০ মিনিটেরও বেশি।

ইতোপূর্বে ট্রেন যমুনা সেতু হয়ে চলাচল করেছে। যমুনা সেতু মূলত সড়ক যোগাযোগের উদ্দেশ্যে নির্মিত হওয়ায় দ্রুত গতির ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী। একারণে সেতু পারাপারে ট্রেন অত্যন্ত ধীর গতিতে চলেছে। ফলে  ঢাকার সাথে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মধ্যে রেলযাত্রায় অনেক বেশী সময় লেগেছে। যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ায় ট্রেন প্রতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু অতিক্রম করতে পারবে। ফলে যাতায়াতের সময় কমে আসবে উল্লেখযোগ্যভাবে।

এ সেতুর মোট পিয়ার সংখ্যা ৫০টি এবং স্প্যান সংখ্যা ৪৯টি। ‘যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি গত ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে গত ২০২০ সালের ৩ মার্চ ১ম সংশোধিত ডিপিপি একনেক সভায় অনুমোদন হয়। ১ম সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা । জিওবি ৪ হাজার ৬৩১ কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা যা ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং জাইকার প্রকল্প সাহায্য ১২ হাজার ১৪৯ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা যা  ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রকল্পের অনুমোদিত মেয়াদকাল ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছে ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকসহ ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল সেতু নির্মাণ, সেতুর উভয় প্রান্তে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে এপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ। সেতুর পূর্ব প্রান্তের ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন এবং পশ্চিম প্রান্তের সয়দাবাদ স্টেশন ভবন আধুনিকীকরণসহ ইয়ার্ড রিমডেলিং, সেতুর পূর্ব প্রান্তের ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন এবং পশ্চিম প্রান্তের সয়দাবাদ স্টেশনের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার মডিফিকেশন, রেলসেতু মিউজিয়াম ও ইন্সপেকশন বাংলো নির্মাণ, সেতু রক্ষণাবেক্ষণে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য অফিস ও আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং নদী শাসন কাজ মেরামত/পুনর্নির্মাণ।

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) মালিকানাধীন মোট ৪৩১.০৯০৬ একর ভূমি বাংলাদেশ রেলওয়ে বরাবর হস্তান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬৮.৪৭০৩ একর স্থায়ীভাবে এবং ২৬২.৫২০৩ একর অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করা হয়। মোট চারটি প্যাকেজের আওতায় প্রকল্পের কাজ সম্পাদন করা হয়েছে।

প্যাকেজ-১ এর আওতায় সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন, দরপত্র সহায়তা এবং নির্মাণ কাজ সুপারভিশন পরামর্শক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। গত ০২ মার্চ ২০১৭ তারিখে পরামর্শক সেবার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালের ২ আগস্ট থেকে কাজ শুরু হয়েছে। চুক্তি মূল্য মোট ৭৯৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা (পিএ-৫৮৮.৬৪৮০ কোটি টাকা ও জিওবি-২০৬.০২৬৮ কোটি টাকা)।

প্যাকেজ-২, এর  আওতায় সেতুর পূর্বভাগের পিয়ার নং-২৪ থেকে পিয়ার নং-৫০ পর্যন্ত অংশের মূল সেতু, পূর্ব দিকের এপ্রোচ ভায়াডাক্ট ও এপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট, সেতুর পিয়ার নং-২৪ হতে ৫০ পর্যন্ত অংশের সুপার স্ট্র্যাকচারসহ এপ্রোচ ট্র্যাক ও ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন ইয়ার্ডের ট্র্যাক এবং ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন ভবন, প্লাটফরম, প্লাটফরম শেড, কালভার্ট, নদীশাসন কাজের মেরামত/পুনর্নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক স্ট্র্যাকচার নির্মাণ করা হয়েছে।

এ কাজের জন্য জাপানী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওটিজি জেভি এর সাথে গত ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং গত ২০২০ সালের ১০ আগস্ট চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তির মেয়াদ ৪৮ মাস। চুক্তি মূল্য মোট ৬ হাজার ৮০১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৬ হাজার টাকা (পিএ-৫৯১৪.৫৬২৩ কোটি টাকা ও জিওবি-৮৮৭.১৮৪৩ কোটি টাকা)।

প্যাকেজ-৩ এর আওতায় সেতুর পশ্চিমভাগের পিয়ার নং-১ হতে পিয়ার নং-২৩ পর্যন্ত (পিয়ার নং-২৩ ও ২৪ এর সুপার স্ট্র্যাকচারসহ) অংশের মূল সেতু, পশ্চিম দিকের এপ্রোচ ভায়াডাক্ট ও এপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট, সেতুর পিয়ার নং-১ হতে ২৩ পর্যন্ত অংশের সুপার স্ট্র্যাকচারসহ এপ্রোচ ট্র্যাক ও সয়দাবাদ স্টেশন ইয়ার্ডের ট্র্যাক এবং সয়দাবাদ স্টেশন ভবন, প্লাটফরম, প্লাটফরম শেড, কালভার্ট, নদীশাসন কাজের মেরামত/পুনর্নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক স্ট্র্যাকচার নির্মাণ করা হয়েছে। জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আইএইচআই-এসএমসিসি জেভি এর সাথে গত ২০২০ সালের ৫ এপ্রিলে কাজের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ২০২০ সালের ১০ আগস্ট চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তি মূল্য মোট ৬ হাজার ১৪৮ কোটি ৩২ লাখ ১৭ হাজার টাকা (পিএ-৫৩৪৬.৩৬৬৭ কোটি টাকা ও জিওবি-৮০১.৯৫৫০ কোটি টাকা)।

প্যাকেজ-৪, এর আওতায় ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন ও সয়দাবাদ স্টেশনের কম্পিউটার বেজ ইন্টারলকিং (সিবিআই) সিগনালিং ব্যবস্থা এবং টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থা স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইয়াশিমা-জিএসই জেভি এর সাথে গত ২০২০ সালের ২২ মে কাজের চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং গত ২০২২ সালের ১০ আগস্ট চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তির মেয়াদ ২৮ মাস। চুক্তি মূল্য মোট ৪৭ কোটি ৭১ লাখ ২৬ হাজার টাকা (পিএ-৪১.৪৮৯২ কোটি টাকা ও জিওবি-৬.২২৩৪ কোটি টাকা)।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন- এর সভাপতিত্বে আয়োজিত উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সকল প্যাকেজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মোঃ মাসউদুর রহমান।

সূত্র: বাসস