ঢাকা | মার্চ ১৩, ২০২৫ - ৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পর করছে দর্জিরা

  • আপডেট: Thursday, March 13, 2025 - 12:14 am

কবীর তুহিন: ঈদকে সামনে রেখে আয় বাড়াতে দিন-রাত এক করে কাজ করে চলেছেন নগরীর সেলাই কারিগররা। ফ্যাশন-সচেতন আর রুচিশীল ব্যক্তিরা ছুটছেন টেইলার্সে। আগেভাগে নিজেদের পছন্দের জামা-কাপড় বানিয়ে রাখছেন তারা।

এজন্য নগরীর সাহেববাজারসহ নিউমার্কেট ও কোর্ট এলাকায় বড়েছে ঈদ কেন্দ্রীক সেলাই কারিগরদের ব্যস্ততা। চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতাদের হাতে পোশাক তুলে দিতে দিন-রাত কাজ করছেন এই কারিগররা।

রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম সাহেববাজারের বাঁধন টেইলার্স এর স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ জানান, তারা ২০ রোজা পর্যন্ত অর্ডার নিবেন। এবার তুলনামূলক কাজের চাপ কম। তার টেইলার্স এ সালোয়ার-কামিজের অর্ডার বেশি হচ্ছে। এবার পাকিস্তানী জর্জেট কাপড়ের অর্ডার অনেক বেশি।

বাঁধনে অর্ডার দিতে আসা এক নারী বলেন, টেইলার্স এ অর্ডার দিলে মনের মতো করে কাপড় বানানো যায়। তাই উনি প্রতি ঈদে এখান থেকে বোরখা বানান।

আরডিএ মার্কেটে অন্যন্যা লেডিস টেইলার এর মালিক টনি বলেন, অনলাইনে কেনাকাটার কারনে তাদের অর্ডারের কাপড় বানানোর গ্রহক কিছুটা কমেছে। অন্যন্যা লেডিস টেইলার এ কাপড় বানাতে আসা স্বর্ণালী জানান, আমি ছোট বেলায় আম্মুর হাত ধরে আসতাম এই টেইলার্সে।

সেই থেকে এই টেইলার্স‘র জামা-কাপড় পরে আসছি। সেই অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে। আমার পড়ালেখা শেষ হয়ে গেলেও আমি টেইলার্সের কাপড় বানিয়ে পড়তে পছন্দ করি।

নগরীর অন্যতম অন্যন্যা টেইলার্সের মানিক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অনলাইন ও রেডিমেড কাপড়ের কারনে টেইলার্সগুলো প্রায় ধ্বংসের মুখে। বিগত দশ বছর আগে রোজা শুরুর কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিতাম। এখন অর্ডার নাই বললেই চলে। ছন্দা টেইলার্স এর সিরাজ ও যুথি টেইলার্স এর মুরসেদ আলী একই কথা বলেন।

একটি সালোয়ার-কামিজ বানাতে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মজুরি ধরা হয়। এর অর্ধেক চলে যায় কারিগরদের পিছনে। আগে আমরা রোজাতে দিন-রাত সময় পেতাম না। ১১ রোজায় দোকানে তেমন অর্ডার নাই।

সাহেববাজারের জ্যোতি টেইলার্সের মালিক হেলাল বলেন, আমাদের টেইলার্সের অর্ডার এখনো নিচ্ছি। তবে আগের চেয়ে এবার অর্ডার অনেক কম। তিনি আরও বলেন, অনলাইনের প্রভাব কিছুটা আমাদের টেইলার্সেও পড়েছে।

সাহেববাজারের কেয়া টেইলার্সের মালিক রুবেল বলেন, এবার পাকিস্তানী জর্জেটের কাজ অনেক বেশি। এবার ইন্ডিয়ান কাপড়ের অর্ডার খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। সরজমিনে নগরীর কয়েকটি টেইলার্স ঘুরে দেখা যায়, সালোয়ার-কামিজ বানাতে ৩০০ থেকে ৩৫০, ব্লাউজ ১৫০, ব্লাউজ (ডবল) ৩০০, পেটিকোট ৮০ থেকে ১০০, ম্যাক্সি ১২০ থেকে ১৩০, গাউন ৩০০ থেকে ৪০০, বোরকা ৩০০ থেকে ৫০০, শিশুদের ফ্রগ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি নেয়া হয়।

ডিজইনের ওপর ভিত্তি করে অনেক সময় মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যেমন খুব বেশি  ডিজাইন থাকলে ১০০০ থেকে ১৫০০ পর্যন্ত মজুরি ধরা হয়, ব্লাউজ ও বোরকার অর্ডার বেশি নগরীর এই টেইলারগুলোতে।

নগরীর নিউমাকের্টের ছেলেদের পোশাক বানানো টেইলার্স মালিকরা বলেন, মেয়েরা যেমন নিত্যনতুন বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক বানাতে আসেন, তেমনি ঈদের সময় শার্ট-প্যান্টের চেয়ে ছেলেদের বেশি আগ্রহ পাঞ্জাবিতে। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আঁচ লেগেছে দোকানগুলোতেও।

যেখানে আমরা একটি প্যান্ট বানাতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি নিয়ে থাকি। এই মজুরির টাকা দিয়ে একজন সহজে রেডিমেড প্যান্ট পেয়ে যাবেন যে কোনো শো-রুমে গেলেই। শার্টের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ৩০০ থেকে ৫০০ মজুরি দিয়ে শার্ট বানিয়ে না পড়ে ওই টাকা দিয়ে একটি রেডিমেড শার্ট দোকানে পাওয়া যাবে। তাই ছেলেদের পোশাক তৈরির টেইলার্সগুলো ঈদের বাজারে খুব একটা ব্যস্ত সময় পার করেন না।