ঢাকা | মে ১৪, ২০২৫ - ২:৪০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহীতে চিকিৎসকদের আন্দোলনে চিকিৎসাসেবা অচল প্রায়

  • আপডেট: Tuesday, March 11, 2025 - 10:49 pm

স্টাফ রিপোর্টার: পাঁচ দফা দাবিতে রাজশাহীতে আন্দোলনরত ইন্টার্ন ও ট্রেইনি চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরাও।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রোগীদের কোনো সেবা দিচ্ছেন না তাঁরা। পাশাপাশি বন্ধ করে দিয়েছেন প্রাইভেট প্র্যাকটিসও।

ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

দুপুরের দিকে চিকিৎসক ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রামেক হাসপাতাল এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ কোন্দকার ফাইসাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ডা. আজিজুল হক আজাদ ও ড্যাবের সাধারন সম্পাদক মনোয়ার তারিখ সাবু প্রমুখ।

মানববন্ধন  থেকে চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগ ছাড়া সব ধরনের সেবা বন্ধের ঘোষণা দেন।

দাবি আদায় না হলে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। এরপরই রাজশাহীর স্বাস্থ্যসেবা অচল হয়ে পড়েছে।

রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দফায় দফায় আলটিমেটাম দিয়েছি, কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। ফলে এখন আমাদের সঙ্গে সিনিয়র স্যাররাও (চিকিৎসক) যোগ দিয়েছেন। এরপরও দাবি আদায় না হলে আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে বাধ্য হব।’

রামেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা জানান, সকাল থেকে ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক নেই। কোনো রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে গেলে পরামর্শ নেওয়ার জন্য তাঁরা কাউকে পাচ্ছেন না। নার্সদের কাছে গেলে তাঁরা বলছেন, তাঁদের কিছুই করার নেই। এদিন সকাল থেকে হাসপাতালটির বহির্বিভাগেও কোনো চিকিৎসক রোগীদের সেবা দেননি।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হচ্ছে দূরদূরান্ত থেকে রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে আসা রোগীদের। ক্লিনিকপাড়া হিসেবে পরিচিত নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় অনেক রোগীকে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে একজন চিকিৎসকের দেখা পাওয়ার আশায়। কিন্তু কোথাও চিকিৎসক বসেননি।

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তা প্রহরী শহিদুল ইসলাম হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন, কোনো ডাক্তার বসবেন না। তিনি রোগীদের ফিরে যেতে বলছিলেন। পরবর্তীকালে হটলাইন নম্বরে ফোন করে নিশ্চিত হওয়ার পর যেন তাঁরা আসেন, সে আহ্বানও জানাচ্ছিলেন শহিদুল। তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হতাশ রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে হুইলচেয়ারে বসেছিলেন কিডনির রোগী আনোয়ারা খাতুন। তাঁর বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার করন্দি গ্রামে।

তাঁর ছেলে আবদুল আলিম বলেন, ‘১ হাজার ৬০০ টাকা মাইক্রো ভাড়া দিয়ে এইমাত্র মেহেরপুর থেকে এসে পৌঁছালাম। এসেই শুনছি যে আজ ডাক্তার বসবেন না। এখন ফিরেও যেতে পারছি না রোগী নিয়ে। কী করব বুঝতে পারছি না।’

চুয়াডাঙ্গা থেকে হৃদ্রোগে আক্রান্ত মেয়ে তানিয়া খাতুনকে নিয়ে এসেছেন স্বজনেরা। তানিয়ার মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছি।

ট্রেনে এসে পৌঁছেছি দুপুরে। এখন এখানে এসে শুনছি যে ডাক্তার বসবেন না। ডাক্তার বসবেন না, তা আগে বললেই তো হতো। চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী আসাটা কি মুখের কথা! এত কষ্ট কেন দেবে?’

শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট থেকে কিডনি রোগী শিখা রানীকে এনেছিলেন তাঁর স্বজনেরা। অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামার পর তাঁরাও শোনেন যে ডাক্তার বসবেন না। শিখার মা ইতি রানী বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে গেলে ঠিকমতো ডাক্তার পাওয়া যায় না। এখানে এসেও শুনছি ডাক্তার নাই। এটা কেমন কথা! রোগীদের জিম্মি করে এ কেমন আন্দোলন!’

এছাড়া নগরীর অন্য বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও কোনো ডাক্তার দেখা যায়নি। গ্রিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাউন্টার ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমরা সকালেও রোগীদের সিরিয়াল নিয়েছি। আমাদের অন্তত আগে জানালে রোগীদের সিরিয়াল নিতাম না। রোগীরাও তাহলে এসে হয়রানি হতো না। এখন রোগীরা হয়রানি হলেও আমাদের কিছু করার নেই।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘সম্প্রতি প্রথমে ইন্টার্ন, পরে ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি শুরু হয়।

মঙ্গলবার থেকে সিনিয়র ডাক্তাররাও তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। তাঁরা আউটডোরে বসেননি। প্রাইভেট চেম্বারও বন্ধ রেখেছেন।’

তিনি বলেন, রামেক হাসপাতালে মোট ওয়ার্ড ৬০টি। এর মধ্যে শুধু জরুরি বিভাগ এবং যেসব ওয়ার্ডে গতকাল

রোগী ভর্তি করা হচ্ছে সে ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসক আছেন। ভর্তির পর রোগীকে দেখে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হচ্ছে। জরুরি অস্ত্রোপচার চলছে বলেও জানান তিনি।

তবে আগে থেকেই ভর্তি থাকা রোগীরা কী সেবা পাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘এই আন্দোলন হয়তো খুব লম্বা সময় চলবে না। আজ বুধবার হাইকোর্টে একটা রায় হবে। সে রায় দেখার পর ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

উল্লেখ্য, এমবিবিএস ও বিডিএস ব্যতীত কেউ যেন নামের আগে চিকিৎসক লিখতে না পারেন, বিএমডিসির এই আইনের বিরুদ্ধে করা রিট প্রত্যাহার এবং বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন শুধু এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রিধারীদের দেওয়াসহ পাঁচ দফা দাবিতে কিছুদিন ধরেই আন্দোলন চলছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS