ঢাকা | মার্চ ১০, ২০২৫ - ৭:১১ অপরাহ্ন

মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে লাভবান উল্লাপাড়ার কৃষকরা

  • আপডেট: Monday, March 10, 2025 - 1:37 pm

অনলাইন ডেস্ক: পুষ্টিগুণে ভরপুর টমেটো। কাঁচা বা রান্না করা, জুস বা কেচাপ, মিষ্টি, টক বা নোনতা যে কোনো উপায়েই এটি খাওয়া যায়। অনেকে আবার সালাদ বানিয়ে টমেটো খান। রান্নায় স্বাদ এবং রং আনতেও টমেটোর জুড়ি মেলা ভার। টমেটো পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। এ ছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপিন যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণসহ নানা রোগ ব্যাধি থেকে দূরে রাখে। এ কারণে টমেটোর চাহিদা দিন-দিন বেড়েই চলেছে।

সম্প্রতি জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার আলিয়ারপুর গ্রামের মৃত মজিবর আকন্দ ও মোছাঃ জাহানারা খাতুন দম্পতির পুত্র কৃষক নেজাব আলি (৪০) মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। মালচিং হলো এক ধরনের পলিথিন। তাকে অনুসরণ করে মালচিং পদ্ধতিতে এখন অনেকেই টমেটো চাষের স্বপ্ন দেখছেন।

বাসসের সাথে আলাপকালে নেজাব আলী বলেন, মানব মুক্তি সংস্থা (এমএমএস) থেকে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে নিজ বাড়ির সাথে মাত্র  ২৫ শতাংশ  জমিতে বেড প্রস্তুত করে ২০২৪ সালের অক্টোবর এর শেষে চারা রোপণ করে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার তৈরি করা বাগানে প্রতিটা গাছে বিপুল পরিমাণ টমেটো ধরে আছে। যা অনেকেই দেখতে আসছেন। আমি ইতোমধ্যে প্রায় ৮ মন টমেটো বাজারে বিক্রি করেছি।

তিনি জানান, ২৫ শতক জমিতে টমেটো চাষ করে তার মোট খরচ  ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা। তবে এবার বাজারে টমেটোর দাম কম থাকায় লাভের পরিমাণ একটু কম। তা সত্ত্বেও এবছর ২৫/৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এমএমএস-এর কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল  জানান, মালচিং হলো এক ধরনের পলিথিন। যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। রোগজীবাণু থেকেও গাছকে রক্ষা করে। অতিরিক্ত পানি রোধ করে। গাছের গোড়ায় আগাছা হয় না। এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে হলে প্রথমে জমি তৈরি করে মাটির সঙ্গে প্রয়োজন মতো সার মিশিয়ে নিয়ে বেড তৈরি করতে হয়।

তিনি জানান, বেডের প্রস্থ হবে এক মিটার। এক বেড থেকে আরেক বেডের দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার। এরপর জমিতে তৈরি করা সবকটি বেড মালচিং পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। পলিথিনের নিচে যাতে পানি প্রবেশ করতে না পারে তাই বেডের চারপাশে পলিথিনের উপরে ভালোভাবে মাটিচাপা দিতে হবে। বেডে চারা রোপণের জন্য ১৮ ইঞ্চি দূরত্ব রাখতে হবে। এরপর চার ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে ছিদ্র করে ওই ছিদ্রে টমেটোর চারা রোপণ করতে হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, এ উপজেলায় কৃষির বৈচিত্র্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এখানে বিভিন্ন বিলসহ নিচু ও সমতল এলাকার  কৃষিতে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে এখানে যে সব ফসল উৎপাদিত হচ্ছে তার মধ্যে টমেটো চাষ করে আলিয়ারপুরের নেজাব আলী-সহ বেশ কয়েকজন কৃষক ব্যাপক হারে সফলতা পেয়েছেন।

তিনি বলেন, টমেটো চাষ লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। টমেটোর ফলন এবং দাম দুটিই ভালো হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। তাদের এ সাফল্য দেখে এখন অন্য চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। মানব মুক্তি সংস্থার এহেন উদ্যোগের প্রশংসা করেন তিনি।

সুবর্ণা ইয়াসমিন জানান, এবছর উল্লাপাড়ায় মোট ৫১ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। তার মধ্যে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে।

কৃষি অফিসারের মতে, মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে প্রায় ১০ থেকে ২৫ ভাগ আদ্রতা সংরক্ষণ করা সম্ভব। এ পদ্ধতি খুবই সুন্দর একটা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করলে জমিতে আগাছা হয়না বললেই চলে। মালচিং পেপারে কার্বন থাকার কারণে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং সারের গুণাগুণ ঠিক থাকে ফলে ফলনও বৃদ্ধি পায়।

সূত্র: বাসস