ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি পালন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল রোববার নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’-এর ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫টি বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছেন।
শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ পর্বনির্ধারিত কর্মসূচির ঘোষণা অনুযায়ী রোববার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২টায় আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করে সড়ক থেকে সরে আসেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ সমাবেশে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আজকে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। অবিলম্বে ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করার জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো বন্ধ করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের শাসনকার্য পরিচালনার অধিকার রাখে না।
ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আপনারা যে চেয়ার পেয়েছেন, সেটার মূল্যায়ন করতে না পারলে অবিলম্বে চেয়ার ছেড়ে দেন। এই দেশের ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার হাসিনাকে সরাতে পারলে ধর্ষকদেরও এই বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করার ক্ষমতা রাখে। আজকে শিক্ষার্থীদের জনসমুদ্র আরেকটি জুলাইয়ের ইঙ্গিত করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাচ্ছি না।’
শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমাবেশ নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে নারী নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে শাসকদের দায়িত্বহীন আচরণ। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এমন বিচারহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতা কখনোই কাম্য নয়। সকলকে নিপীড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা। তিনি বলেন, ‘আট বছরের আছিয়া পরিবারের আশ্রয়ে ঘরের মধ্যেই ধর্ষিত হয়েছে। তাহলে নারী কোথায় নিরাপদ? রাস্তায় না, দোকানে না, ঘরে না, কোথাও নিরাপদ নন।
এখন আসলে নারীর অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছে। প্রতিটা ঘটনা এই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে নারীকে অস্তিত্বহীন করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা নারীরা ঘর-রাস্তা কোনো জায়গা ছাড়ব না। আমরা কথা বলব ও প্রতিবাদ গড়ে তুলব।’
সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার। এ সময় বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী ও বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন ও সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ রাজা, ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হাবিব জাকারিয়া, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শ্রুভ্রা রানী চন্দসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা এদিকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৫ বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁরা গতকাল কোনো ধরনের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি। গত শনিবার দিবাগত রাত ২টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে এ ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ফেসবুক সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনশন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্সসহ বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।