ঢাকা | মার্চ ১০, ২০২৫ - ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন, দামে হতাশ রাজশাহীর আলুচাষিরা

  • আপডেট: Sunday, March 9, 2025 - 10:30 pm

কাজী নাজমুল ইসলাম: রাজশাহীর আলুচাষিরা এখন মাঠ থেকে আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না উঠায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

আলুচাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন মাঠ থেকে আলু উঠাতে চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা মাঠ থেকে আলু উঠিয়ে রাজশাহীর কোল্ড স্টোরেজগুলোতে সংরক্ষণ করছেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টায় কোল্ড স্টোরেজ গুলোতে চলছে আলু রাখার ব্যস্ততা। যাতে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবার আগেই আলু সংরক্ষণ করা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর দেশের মানুষকে রেকর্ড ৭০ টাকা কেজিতে আলু কিনতে হয়েছে। এর আগে কোন দিন এতো দামে আলু বিক্রি হয়নি। ফলে এবার সারা দেশে আলুর আবাদ বৃদ্ধি পায়। শুধু রাজশাহীতেই এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ হাজার বিঘা বেশি জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া আলু চাষের অনুকূলে থাকায় এবার আলুর ভালো ফলন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, কুয়াশা না থাকা এবং দীর্ঘস্থায়ী শীত আলুর জন্য ভালো। এবার সে রকমই আবহাওয়া ছিল। ফলে অনুকূল আবহাওয়ায় আলু আবাদে বালাইনাশকের খরচ কম হয়েছে এবং ফলন ভালো রয়েছে। চাষিরা বলেন এবার গড়ে তারা বিঘায় প্রায় ৯০ থেকে ১১০ মন আলু পাচ্ছেন।

কিন্তু এবার উৎপাদন খরচের তুলনায় আলুর দাম কম থাকায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। চাষিরা বলেন, প্রতি বিঘায় আলু আবাদ করতে এবার সবমিলিয়ে খরচ পড়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ উঠতে প্রতি কেজি আলুর দাম অন্তত ২৫ টাকা থাকতে হবে।

কিন্তু এখন প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ থেকে ২১ টাকায়। এই দামে আলু বিক্রি করলে চাষিদেরকে লোকসান গুণতে হবে। বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিরা খুশি হলেও দাম কমের কারণে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

পবার বড়গাছীর নওদাপাড়ার আলুচাষি আলাউদ্দিন আহম্মেদ জানান, গত বছর স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ দামে প্রতিকেজি ৭০ টাকায় খাবার আলু বিক্রি হয়েছে। বীজ আলু বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ১শ’ টাকার ওপরে। এই দামে বীজ কিনে তারা এবার আলু আবাদ করেছিলেন। তাছাড়া জমির লিজ খরচও কিছুটা বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ তাদের কিছুটা বেশি পড়েছে।

এবার তিনি ৩ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। বীজের দাম বেশি থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার একদিকে যেমন ফলন ভালো হয়েছে অন্যদিকে এবার আলুর রোগ বালাই কম হওয়ায় বালাইনাশকের খরচ কম হয়েছে। চাষিরা এখন মাঠ থেকে আলু উঠিয়ে কেউ কোল্ড স্টোরেজে রাখছেন, আবার কেউ বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করছেন। আলুর দাম অরেকটু বেশি হলে তারা লাভবান হতেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর মাঠ থেকে প্রায় ২০ ভাগ আলু ইতিমধ্যে উঠানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর ভালো ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৬২৯ হেক্টরে। গতবছর এখানে আবাদ হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, আলুর দাম ভালো থাকায় এবার রাজশাহীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। রাজশাহীর চাষিরা এখন মাঠ থেকে আলু উঠাতে ব্যস্ত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও রোগ বালাই কম হওয়ায় এবার আলুর ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা।