ঢাকা | মার্চ ১০, ২০২৫ - ২:৪০ পূর্বাহ্ন

রাসিকের রাজস্ব বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি

  • আপডেট: Saturday, March 8, 2025 - 11:50 pm

মাইনুল হাসান: আওয়ামীলীগ নেতা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামানের রাজনৈতিক প্রভাব ও তার পছন্দের ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট ভেঙে এবার হয়েছে হাট, ঘাট, বাজারের টেন্ডার। ফলে কোনো ধরনের ভীতি ছাড়াই অংশ নিয়েছেন উল্লেখযোগ্য ঠিকাদার। এতে ইজারামূল্য বৃদ্ধি পেয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় ৭ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। বিশ্লেষক ও রাসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তয়ান, সিন্ডিকেট, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেকাংশে কমে যাওয়ায় রাজস্ব বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

বিগত সময়ে রাজশাহী শহিদ জিয়া শিশু পার্কে খাস কালেকশনের মাধ্যমে আদায় হতো রাজস্ব। এক বছরে আয় হতো ১৭ লাখ টাকা। এবার ৩ বছরের জন্য প্রথমবারের মতো টেন্ডার দিয়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বাংলা ১৪৩১ সালে রাজশাহী সিটি পশুহাট ইজারা দিয়ে সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব পেয়েছিল ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ১৪৩২ সাল অর্থাৎ আগামী বাংলা বছরের জন্য সেই একই পশু হাটের ইজারা রাজস্ব আয় প্রায় ১৩ কোটি টাকা।

সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, চলতি বাংলা বছরে হাট, ঘাট, বাজার, গণ সৌচাগার, পার্কিং, স্ট্যান্ড, পুকুর ইজারা দিয়ে তারা আয় করেছিলেন ৭ কোটি টাকা। আগামী বাংলা বছরে সেই রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। যা দ্বিগুণেরও বেশি।

ঠিকাদাররা বলছেন, রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা না থাকায় বেশি সংখ্যক ঠিকাদার টেন্ডারে অংশগ্রহণ করায় বেড়েছে রাজস্ব আয়। ঠিকাদাররা জানিয়েছেন, বর্তমানে দরপত্রের বাক্স সবার সামনেই খোলা হচ্ছে। এতে ঠিকাদারদের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সঠিক দরদাতা ইজারা পাচ্ছেন। যা সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের শাসন আমলে হয়নি। তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করাতেন, কমিশনের বিনিময়ে। তার সময় অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়ার সাহস পেত না।

ঠিকাদাররা আরও জানান, সাবেক মেয়র লিটনের সিন্ডিকেট না থাকায় ঠিকাদাররা ইচ্ছেমতো দরপত্র জমা দিতে পারছেন। ঠিকাদারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে আগামীতে প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়বে। তবে এখনও আওয়ামী লীগ মদদপুষ্ট কিছু ঠিকাদার স্বচ্ছ এই টেন্ডার প্রক্রিয়া নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকেই কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, এএইচএম খায়রুজ্জামন লিটন মেয়র থাকাকালে হাট, ঘাট নামে মাত্র মূল্যে তার সিন্ডিকেটের কজন ঠিকাদারকে পাইয়ে দিয়েছেন। এতে লিটন ও তার পরিবার লাভবান হলেও সরকার হারিয়েছে প্রাপ্য রাজস্ব। আর ঘাটতি পূরণে নগরবাসীর কাধে চাপিয়েছে করের বোঝা।

বিশ্লেষক ও কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, সরকার দলীয় প্রভাব ও রাজনৈতিক পরিচয়ে ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট না থাকা, এবং স্বচ্ছভাবে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় এমন ইতিবাচক পরিবর্তন।

রাজশাহী সিডিআইআর প্রধান পরামর্শক সুব্রত কুমার পাল বলেন, আগে যারা হাট, ঘাট ও বাজার ইজারা নিয়েছে রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে। এজন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ তার বিপুল রাজস্ব হারিয়েছে। আমরা মনেকরি, ইজারা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্বশীল আচরণের পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম. শরীফ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে এমন একটা পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে ঠিকাদাররা স্বত:ফূর্তভাবে অংশ গ্রহণ করছেন এবং তারা মনে করছেন আগামীতে পরিবেশ আরও ভালো হবে উন্নত হবে, তাতে হয়তো তাদের হাট বাজারের কেনাকাটা বৃদ্ধি পাবে। তারা বেশি দর দিয়ে হাট, ঘাট বা বাজার নিলেও হয়তো লাভ করবে। এই আশায় তুলনামূলক প্রতিযোগিতায় বেশ ভালো দর দাখিল করেছে। এতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন রাজস্ব বেশি  পেয়েছে। সেবা খাত ব্যতিত অন্যান্য প্রচলিত ও অপ্রচলিত খাতেও রাজস্ব আয় বাড়াতে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।