জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ভরাট ‘জোড়া পুকুর’ পূর্বের অবস্থায় আনা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে ভরাট হওয়া পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু প্রশাসনের। নগরীর ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা আয়তনের পুকুর কিছুদিন ধরে অল্প অল্প করে ভরাট করা হচ্ছিল। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যোবায়ের হোসেনকে ভোরাট বন্ধের তৎক্ষণিক বন্ধের নির্দেশ দেন। পরে নগরীর বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি শ্রমিক নিয়ে পুকুরটির উদ্ধার কার্যক্রমও শুরু করেন। এই পুকুর নগরীর ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লায়। এটি ‘জোড়া পুকুর’ নামে পরিচিত। বোয়ালিয়া মৌজায় অবস্থিত এই পুকুর ব্যক্তি মালিকানাধীন। তবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সংরক্ষণের তালিকায়ও পুকুরটি আছে। এর অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি করে কিছুদিন ধরে ভরাট শুরু করেছিলেন হিকু নামের ওই এলাকারই এক ঠিকাদার।
একসময় রাজশাহী শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল। কিন্তু অল্প কিছু পুকুর ছাড়া সবই ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট করে। তখন বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয় গণনা করে নগরীর ৯৫২টি পুকুরের অস্তিত্ব পায়।
২০২২ সালের ৮ আগস্ট হাইকোর্ট এই পুকুরগুলো সংরক্ষণসহ কয়েকটি নির্দেশনা দেন। রাজশাহী শহরে আর কোনো পুকুর যেন ভরাট না হয়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। পাশাপাশি ভরাট হওয়া পুকুরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনারও নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনার পরও শহরে একের পর এক পুকুর ভরাট হয়েছে। দীর্ঘ সময়েও একটি পুকুরও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়নি। এই প্রথম ঘোষপাড়া ফকিরপাড়া মহল্লার পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এতে খুশি এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পুকুরে পড়ে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত থেকে পুকুর ভরাট শুরু হয়েছিল। দুই প্রান্তে ২১ জন শ্রমিক পুকুর উদ্ধারের কাজ করছেন। তারা পুকুরে ফেলা মাটি কেটে পাড়ে আনছেন। পুকুরের সামনে একটি নোটিশও টাঙানো হয়েছে। এতে লেখা, ‘এই পুকুর ভরাট করা নিষিদ্ধ।
ময়লা-আবর্জনাসহ অন্য যেকোনোভাবে পুকুর ভরাট করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আদেশক্রমে সহকারী কমিশনার, বোয়ালিয়া, রাজশাহী।’
শ্রমিকদের সর্দার রেজাউল করিম বলেন, সকালে এসিল্যান্ড স্যার এসেছিলেন। মাপজোখ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে কত দূর পর্যন্ত মাটি কেটে ওপরে তুলতে হবে। আমরা কাজ শুরু করেছি।’ পুকুরপাড়ে ছিলেন ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। তারা জানান, পুকুরটির আয়তন প্রায় সাড়ে তিন বিঘা।
এর মধ্যে দুই পাড়ে প্রায় ১০ কাঠা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। খতিয়ানে যে অংশটুকু পুকুর, সেটুকু তারা উদ্ধার করবেন। সেই মাটি কেটে পাড়ের অংশে ফেলা হবে।
বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিজিৎ সরকার বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন আমাদের জানান যে পুকুরটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা যদি পুকুর ভরাটের খোঁজ পাই, তাহলে আগামীতেও অবশ্যই এই কার্যক্রম চলবে।