ঢাকা | মার্চ ৭, ২০২৫ - ১:০৯ পূর্বাহ্ন

চিকিৎসক সঙ্কট ধুঁকে ধুঁকে চলছে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

  • আপডেট: Thursday, March 6, 2025 - 9:50 pm

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: প্রায় ৫ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার ভরসাস্থল নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন ৪০০ থেকে ৪৫০ জন রোগী। কিন্তু চিকিৎসক সঙ্কটে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররাই এখন সেবাপ্রার্থী রোগীদের একমাত্র ভরসা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে যে ৪ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন, তাদের দিয়ে টেনেটুনে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে জরুরি ও অন্ত:বিভাগের কাজ। রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির জনবল সঙ্কটও। এমন পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বহির্বিভাগে ২ হাজার ৬৬০ জন, জরুরি বিভাগে ৬৩৭ জন ও অন্ত:বিভাগে ১৯৩ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। কিস্তু চিকিৎসক না থাকায় বিপুল পরিমাণ এসব রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪টি মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও আবাসিক কর্মকর্তাসহ রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে পর্যায়ক্রমে জরুরি ও অন্ত:বিভাগের কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক সঙ্কটে ছোট-ছোট সমস্যাতেও রোগীদের রেফার্ড করা হচ্ছে নওগাঁ কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

সূত্রটি আরও জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আয়া, ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্কট রয়েছে। আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের ৫ পদের বিপরীতে রয়েছেন ২ জন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ৫ পদের জায়গায় আছে মাত্র ১ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে নারী, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের রোগীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখাতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। এদিন কশব ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শামীম হোসেন বলেন, বুকের ব্যথার চিকিৎসা নিতে আমি ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু এমবিবিএস পদের কোনো ডাক্তার পাইনি।

অবশেষে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। ভালো একজন ডাক্তারকে দেখানোর আশা নিয়ে এতদূর থেকে এসেছিলাম। তা পুরণ হয়নি। সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হলো। উপজেলার গোসাইপুর গ্রাম থেকে হার্ট, ডায়াবেটিস ও বুকের ব্যথার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন রোগী রবিউল ইসলাম টিপু। তিনি বলেন, হাসপাতালে কোনো ডাক্তার নাই।

কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারেরা দেখে একটা চিরকুটে কিকি লিখে দিল ভাল লাগেনি। তাই দুধের সাধ ঘোলে মিটিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আগামীতে রাজশাহী শহরে গিয়ে ভাল ডাক্তার দেখাব। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী সুনীল কুমার বলেন, এক সময় এ হাসপাতালে অনেক ডাক্তার থাকায় বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছিল। ভালমানের চিকিৎসা পাওয়ায় ওই সময় হাসপাতালে রোগীর লেগেই ছিল। এখন খুঁজেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। এখন রোগীর চাপ বাড়লেও ডাক্তার না থাকায় সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ উপজেলার মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের সামান্য দূরে হাসপাতালটির অবস্থান হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক বেশি। মহাসড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় দ্রুত চিকিৎসার জন্য আহতদের এ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসক না থাকায় তাদের পাঠানো হয় নওগাঁ কিংবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এতে পথেই অনেক সময় রোগী মৃত্যু ঘটে। এ প্রসঙ্গে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ হাসপাতালে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক আছেন। এদের দিয়ে কোনোভাবে জরুরি ও অন্ত:বিভাগের কাজ চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সঙ্কট রয়েছে। এসব কারণে রোগীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সমস্যার উত্তোরণ হবে।