ঢাকা | মে ৫, ২০২৫ - ৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

ভারত-পাকিস্তানে কাঁচা পাটের চাহিদা বাড়ছে

  • আপডেট: Wednesday, March 5, 2025 - 9:06 pm

অনলাইন ডেস্ক: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা পাটের বাজার খুলনার দৌলতপুরের কাঁচা পাটের চাহিদা ভারত ও পাকিস্তানে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে চীন এই অঞ্চল থেকে কাঁচা পাটের বৃহত্তম আমদানিকারক ছিল।

ভারত ও পাকিস্তানের পাটকলগুলোতে পাটের উচ্চ চাহিদার কারণে তারা খুলনার দৌলতপুর থেকে কাঁচা পাট সংগ্রহ করছে। বেশিরভাগ কাঁচা পাট মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও কুষ্টিয়া জেলা থেকে দৌলতপুরের পাটকলগুলোতে আসে।

ক্রমবর্ধমান বিদেশি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছর থেকে এই অঞ্চলে উন্নত জাতের পাট বিজেআরআই-৯ চাষাবাদ শুরু করার কথা বলছেন কৃষকরা।

পাট ব্যবসায়ীদের মতে, পাটের মৌসুম এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত। এপ্রিল মাসে এর চাষ শুরু হয়। আর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ফসল কাটা শুরু হয়। ১১০-১২০ দিনের মধ্যে পাট গাছ কাটা, জাগ দেওয়া ও আঁশ পৃথকীকরণ সম্পন্ন করা যায়।

পাটের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে মেশতা, সাদা ও তোষার মতো বিভিন্ন জাতের পাট দৌলতপুরে নিয়ে আসেন। মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথে কাঁচা পাটের মজুত কমে যায়।

পলিথিনের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার ফলে পাট-ভিত্তিক পণ্যের চাহিদাও বেড়েছে। ফলে স্থানীয় বেসরকারি পাটকলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলে পাট মূলত বৃহত্তর খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া উপজেলা, তালা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা জেলা সদর ও বাগেরহাটের মোল্লাহাটে চাষ করা হয়। তোষা জাতের পাট এই অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়।

খুলনা বিভাগের পাট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়ার চুকনগর, সাতক্ষীরার ঝাউডাঙ্গা, পাটকেলঘাটা, বাগেরহাটের মোল্লাহাট ও চিতলমারীর মতো স্থানীয় বাজারে তোষা পাট প্রতি মণ ৩ হাজার ১শ’ থেকে ৩ হাজার ৩শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই জাতের পাটের দাম ছিল প্রতি মণ ২ হাজার ৩শ’ থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকার মধ্যে।

পাট বিভাগের সূত্র জানায়, বৈদেশিক চাহিদা ও ডলারের বিনিময় হারের ওপর নির্ভর করে পাটের দাম ওঠানামা করে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মেশতা পাট প্রতি মণ ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা, সাদা ২ হাজার ৮শ’ থেকে ৩ হাজার টাকা এবং তোষা ৩ হাজার ২শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

বাসস’র সাথে আলাপকালে খুলনা পাট বিভাগের সহকারী পরিচালক (পাট) মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের পাটকলগুলোতে কাঁচা পাটের চাহিদা বেড়েছে। গত মৌসুমে দাম কম থাকার কারণে ভারতীয় কৃষকরা পাট চাষ কমিয়ে দেন। ফলে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয়। যা এখন খুলনার পাট বাজারগুলো পূরণ করছে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, পরিবেশের সুরক্ষার জন্য দেশে-বিদেশে দিন দিন পাটজাত পণ্য ও কাঁচা পাটের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলস্বরূপ পাকিস্তান, ভারত ও চীনে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাসস’র সাথে আলাপকালে খুলনাা পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা বাসুদেব হালদার বলেন, দেশের সোনালী আঁশ আগের গৌরব ফিরে আসায় কৃষকরা এখন পাট চাষে আগ্রহী। কৃষকরা এখন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন। সরকার এই অঞ্চলে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ, নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও বীজ প্রদানসহ ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

ডুমুরিয়ার সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা নিলয় মল্লিক বলেন, স্থানীয় কৃষকরা চিংড়ি চাষ থেকে পাট চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উৎপাদনে উৎসাহিত করার জন্য উপজেলার এক হাজার কৃষক বিনামূল্যে বীজ ও সার পাচ্ছেন। এর মধ্যে প্রত্যেক কৃষক ১২ কেজি সার ও এক কেজি বীজ পাচ্ছেন। আগামী মৌসুম থেকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে উচ্চ ফলনশীল বিজেআরআই-৯ জাতের পাট চাষ শুরু হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিজেআরআই-৯ এর উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ৮০ মণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে তোষা জাতের উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ৬৫ মণ।

খুলনা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে খুলনার বাজার থেকে মোট ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৪ বেল কাঁচা পাট রপ্তানি করা হয়েছে।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS