প্রধান শিক্ষক নেই নওগাঁর ৫৯৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

নওগাঁ প্রতিনিধি: জেলার ১১টি উপজেলার প্রায় অর্ধেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষক দিয়ে দায়সারাভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে।
ফলে বছরের পর বছর পদোন্নতি ও মূল্যায়ন না পেয়ে এক প্রকার হতাশা বিরাজ করছে এসব দায়িত্বরত শিক্ষকের মনে। সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। এ জেলার মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৪টি।
এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৫৯৭টিতে। সহকারী শিক্ষকের ৭ হাজার ৩৩৫টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৯৮টি। এসব কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমসহ অন্যান্য কাজ। শিক্ষকরা বলছেন, সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন পদোন্নতি থেকে।
কেউ কেউ বছরের পর বছর একই গ্রেডে চাকরি করলেও মিলছে না পদোন্নতি। এ ছাড়া সরকার কৌশল হিসেবে বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা সাশ্রয় করছে। শিক্ষকরা তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন আশা করছেন। আর শিক্ষা কর্মকর্তা বলছেন মামলা থাকার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ধামইরহাটে প্রধান শিক্ষকের ১১২টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ৪৯টি, পত্নীতলায় ১৩৪টির মধ্যে শূন্য ৫৯টি, বদলগাছীতে ১৩৩টির মধ্যে শূন্য ৬৩টি, মহাদেবপুরে ১৩৫টির মধ্যে শূন্য ৩৩টি, নিয়ামতপুরে ১২৮টির মধ্যে শূন্য ৫২টি,
পোরশায় ৭৮টির মধ্যে শূন্য ৪৩টি, সাপাহারে ৯৬টির মধ্যে শূন্য ৩৮টি, মান্দায় ১৮০টির মধ্যে শূন্য ৭৮টি, আত্রাইয়ে ১৩০টির মধ্যে শূন্য ৬৩টি, রানীনগরে ১০০টির মধ্যে শূন্য ৪৩টি এবং নওগাঁ সদর উপজেলায় ১৩৯টির মধ্যে শূন্য রয়েছে ৬৬টি।
রানীনগর উপজেলার সিংড়াগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মীর্জা আয়েনুল হক (টুটুল) গণমাধ্যমকে বলেন, ভারপ্রাপ্তের ভারে আমার জীবন শেষ। ২৫ বছরের চাকরিজীবনের প্রায় ২০ বছর ভারপ্রাপ্ত হয়েই কাটালাম।
অথচ সরকার সব কাজ করে নেয়। সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও পদোন্নতি বা কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। একইভাবে সব যোগ্যতা থাকার পরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক সহকারী শিক্ষক।
তারা বলছেন, বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে সভা, প্রশিক্ষণ ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে যাওয়া-আসা করতে হয়। বিনিময়ে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। সরকার ইচ্ছা করলেই তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারে।
এক শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড, অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের দশম গ্রেড। আমাদের মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। আর প্রধান শিক্ষকদের ১৬ হাজার টাকা। আমাদের বাড়ি ভাড়া ৪ হাজার ৯৫০ টাকা।
প্রধান শিক্ষকদের ৬ হাজার ৮৮০ টাকা। সব মিলিয়ে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৭ হাজার ৬৫০ টাকা এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন ২৪ হাজার ৫৮০ টাকা। ফলে তাদের সঙ্গে আমাদের বেতনের তারতম্য ৬ হাজার ৯৩০ টাকা।
এখানে সরকার কৌশল হিসেবে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি দিচ্ছে না। কারণ প্রতি বছর সরকারের সাশ্রয় হচ্ছে ৪১ লাখ ৩৭ হাজার ২১০ টাকা। অন্যান্য খরচ দিয়ে আরও ১০-১৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে সরকারের।
আর এ কারণেই হয়তো আমাদের পদোন্নতি দিচ্ছে না। মহাদেবপুর উপজেলার ৩৫নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সবুজ হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষকের অভাবে শ্রেণিকক্ষে শুধু যে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে তা-ই নয়, অন্য শিক্ষকদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা মূলত সহকারী শিক্ষক। অনেক সময় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে পাঠদান বিঘ্নিত হয়। জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিও) সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, জেলার যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেখানে ভারপ্রাপ্ত ও কিছু জায়গায় চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক আছেন।
আর প্রধান শিক্ষকের এই বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাবে না। আমিও চাই এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক। তাই মামলাগুলো শেষ হলে ওই পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।