ঢাকা | মার্চ ৫, ২০২৫ - ২:৫৪ পূর্বাহ্ন

মশার যন্ত্রণায় শহরে টিকে থাকা দায়

  • আপডেট: Tuesday, March 4, 2025 - 11:16 pm

জগদীশ রবিদাস: দিন-দিন যেন দুর্ভোগের নগরীতে পরিণত হচ্ছে পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহী। সবুজায়ন, নির্মল বাতাস, পরিচ্ছন্নতার মত নানা সূচকে রাজশাহীবাসীর জনজীবন বেশ স্বাচ্ছন্দের হলেও সম্প্রতি তা যেন পরিণত হয়েছে অসহ্য যন্ত্রণায়! কোনো মৌসুমেই নগরবাসী স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারছেন না।

বর্ষা, শীত ও শুস্ক মৌসুম বলে কোনো কথা নেই; নগরবাসীকে সারাবছরই যেন পোহাতে হচ্ছে মশার উৎপাত। ঘরে-বাইরে, বাসা কিংবা অফিস সব জায়গাতেই মশার উপদ্রব। মশার যন্ত্রণায় শহরের কোথাও বেশিক্ষণ টিকে থাকা এখন দায়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দাবি, মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলমান আছে। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের কোনো কার্যক্রম কখনোই কাজে আসে না। কাজে আসলে মশা নিয়ে এতো আলোচনা-কথা হতো না, বরং মশা কমে যেত।

এদিকে মশক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গতবারের মতো এবারও রাজশাহী অঞ্চলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিটি করপোরেশনের পক্ষে মশা নিয়ন্ত্রণে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কার্যক্রম চালানোর দাবি করা হলেও নগরীর মিয়াপাড়া, টিকাপাড়া, হড়গ্রাম বাজার, মোল্লাপাড়া, মহিষবাথান,

ছোট বনগ্রাম, দড়িখরবোনা, মালদা কলোনি, শিল্পীপাড়া, মথুরডাঙা, সপুরা, দাশপুকুর, ভাটাপাড়া, কাদিরগঞ্জ, হেতেম খাঁ লিচু বাগান, পাঠানপাড়া, কয়েরদাঁড়া, সাধুর মোড়, মেহেরচন্ডী, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজার,

তালাইমারী শহিদ মিনার, কাজলা, কেদুর মোড়, শিরোইল, সাহাজীপাড়া, নওদাপাড়া, পদ্মা আবাসিকসহ বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় ঘুরে ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,

গত কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে তারা নিজ এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ বা নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখেননি। আর ফগার মেশিনের কার্যক্রম সর্বশেষ কখন দেখেছেন, সেই তারিখ অনেকে মনেই করতে পারেননি।

রমজান মাসের কারণে অনেকেই বিকালের পর ইফতারি কিনতে বের হন। কেউ-কেউ ইফতারের আগ মুহূর্তে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করতে ও খোলামেলায় সময় কাটাতে শহরের টি-বাঁধ, আইবাঁধ, মুক্তমঞ্চসহ পদ্মা নদীর তীরবর্তি এলকায় ভীর করেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ইসমাইল হোসেন নামে একজনকে বসে থাকতে দেখা যায় নগরীর মুক্তমঞ্চে। তিনি বলেন, যে কোনো স্থানে একটু বসলেই যেন মশা উপদ্রব। মশার অসহ্য যন্ত্রণায় এখানে আর বসে থাকতে পারলাম না।

মশা তাড়িয়ে কতক্ষণ থাকা যায়! মশা কামড়ে হাত-পা ফুলিয়ে ফেলেছে। মহানগরীর সপুরা এলাকার মোবারক হোসেন বলেন, দিন রাত মশার যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ। এখনো পুরোপুরিভাবে গরম পড়েনি।

গরম পড়লে মশার উপদ্রব কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা বোঝায় যাচ্ছে! অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, মশার আক্রমণে মানুষ সুষ্ঠুভাবে ঘুমাতে পারছে না, নামাজ পড়তে পারছে না, শুয়ে থাকতে পারছে না, এমন কি খেতে বসেও নিস্তার নেই। দিন-দিন যেভাবে মশার উপদ্রব বাড়ছে তাতে যে কোন সময় রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে ডেঙ্গু জ্বর।

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের রোগী ও স্বজনরাও। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর নিচতলাতে রোগী ও স্বজনরা একবিন্দুও ঘুমাতে পারেন না।

রামেক হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন খানশামা গণমাধ্যমকে বলেন, দুই দিন থেকে রোগী ভর্তি করিয়েছি এখানে। কিন্তু মশার কারণে হাসপাতালে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ সফি উদ্দীন বলেন, কার্যক্রম চালানোর পরেও মশা নিধন না হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে- এটি সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট কোনো এক্সপার্ট সিটি করপোরেশনে নেই।

আমার জানা নেই, তারা যে কীটনাশক ব্যবহার করে তা কেনার আগে কোনো বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়েছে কি না। তারা এটি যদি না করে থাকেন, তবে এটি অর্থের অপচয়ই শুধু নয়, নাগরিকদের প্রতি এক ধরনের নির্যাতন।

এনিয়ে রাসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ ও জনগণকে স্বস্তি দিতে সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা করে যাচ্ছি। ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিত কাউন্সিলররা নেই। কাউন্সিলররা থাকলে এসব কাজগুলো ভালো হয়। লার্ভিসাইড ওষুধ ও ফগার মেশিনের ওষুধের মজুত কম।

ওষুধ কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। গত রোববার অনেক ঠিকাদার দরপত্র দাখিলও করেছেন। আজ বুধবার তাদের সিটি করপোরেশনে ডাকা হয়েছে। তাদের দেয়া ওষুধের নমুনাগুলো বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দ্রুত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হবে। এছাড়াও আগামী শনিবার এ বিষয়ে ৩০টি ওয়ার্ডের সচিবদের নিয়ে নগর ভবনে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

সেই বৈঠকে জনগণের অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি আমরা নগরবাসীরও সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।