রোজার শুরুতেই বাজারে আগুন

* মাছ-মাংসসহ বেড়েছে নানা নিত্যপণ্যের দাম
* বাজার কারসাজি ভাঙতে নিয়মিত অভিযানের দাবি
জগদীশ রবিদাস: আজ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার ‘নিয়ন্ত্রণে’ রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন।
রমজান মাস শুরু হতে না হতেই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম যেন আকাশ ছুঁয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ লেবু, শসা ও বেগুনের দাম হয়েছে দ্বিগুণ।
এক মাস আগেই দাম বেড়েছে মুড়ি, ছোলা, খেজুর, চিড়া ও গুড়ের, যা এখনও সেই দামেই রয়েছে। দাম বেড়েছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসেরও। অপরদিকে, সয়াবিন তেল নিয়ে রীতিমতো ‘আতঙ্ক’ পেয়ে বসেছে ভোক্তাদের। প্রায় দুই মাস ধরে অস্থির থাকা সয়াবিন তেলের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারদের দোষারোপ করলেও ক্রেতারা বলছেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাজার সিন্ডিকেট। বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ভাঙতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার দাবি তাদের।
রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজারে চয়না বেগুনের কেজি মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। কয়েকদিন আগেও যে লেবুর হালি ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেত, এখন সেই লেবুর হালি মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে শসার দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে শসা ও খিরা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। তবে শীতকালীন বিভিন্ন সবজি যেমন- ফুলকপি, গাজর, টমেটো, শিমের দাম এ পর্যন্ত স্থিতিশীল রয়েছে। রমজানে শাক-সবজির চাহিদা কমে যায় বলে এগুলোর দাম খুব একটা বাড়েনি।
ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। আদা প্রতি কেজি ১০০ টাকা, রসুনও প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজারে ২৮, মিনিকেট, নাজিরশাইল ও জিরাশাইল চালের দাম আগের মতোই চড়া।
মিনিকেট চাল মান ও এলাকাভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়। জিরাশাইল প্রতি কেজি ৭৫ টাকা। পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। বাসমতি চাল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডাল প্রতি কেজি ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ১০০ টাকা, কালাইয়ের ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ভারত থেকে চাল আমদানি হলেও তা বাজারে প্রভাব ফেলেনি। কারণ যৌক্তিক মূল্যে একই মানের চাল আনা সম্ভব হয়নি। এদিকে, বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ তুলনামূলক কম। তেলের জন্য ক্রেতাদের দোকান থেকে দোকানে ঘুরতে হচ্ছে। যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেও নির্ধারিত দামে মিলছে না। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, আটা, ময়দা বা পোলাওয়ের চাল না কিনলে ডিলাররা সয়াবিন তেল দিচ্ছেন না।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ১ মার্চ থেকে ১৬২ টাকায় বিক্রি হওয়া কথা থাকলেও বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮২ টাকা লিটার। আর কেজি দরে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯২ টাকায়।
বাজারে মাংসের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল শনিবার বাজারে ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা ছিল। সোনালি মুরগির কেজি প্রতি দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। শনিবার ভালো জাতের সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরু ও খাসির মাংসের দামও বেড়েছে।
শনিবার রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও কিছুটা কম ছিল। খাসির মাংসের দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে এক হাজার ১শ টাকায় পৌঁছেছে। ছাগলের মাংস ১০০ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকায়। মাছের বাজারেও একই অবস্থা।
চাষের চিংড়ি, কই, শিং, তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের দাম কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়েছে। নদীর মাছের দাম আরও বেশি। রুই ও কাতলা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে। টাকি মাছ ৩০০ টাকা, লাইলনটিকা ১৬০, তেলাপিয়া ১৬০, রুপচাঁদা ২৪০, পাঙ্গাস ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, এসব মাছ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে।