ঢাকা | মার্চ ১, ২০২৫ - ৫:৩৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধে সুরভিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগান

  • আপডেট: Friday, February 28, 2025 - 9:35 pm

গাছ ভরা মুকুল স্বপ্ন দেখালেও দুশ্চিন্তায় আমচাষিরা:

ডাবলু কুমার ঘোষ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধে সুরভিত হয়ে উঠেছে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলো। আবহাওয়া অনুকূূলে থাকায় এবার গাছগুলোতে আগেই দেখা মিলেছে মুকুলের। সেই মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আমচাষি ও বাগানমালিকরা। মুকুলে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বাগানগুলোতে চলছে স্প্রেসহ সেচ কার্যক্রম। তবে, গত বছরের তুলনায় এবার মুকুল বেশি আসলেও; পরিচর্যা খরচ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছে চাষিদের।

এ অবস্থায় ভালো ফলন পেতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন ফল গবেষকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে নানা জাতের আমের, আর আমগাছের সংখ্যা হচ্ছে ৮১ লাখ ৫২ হাজার ৪’শ ৯০টি। আর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাতাসে এখন মুকুলের সৌরভ। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে পাগল করা সেই মৌ-মৌ ঘ্রাণ।

মুকুলে মুকুলে ছেয়ে থাকা আমবাগান যেন জানান দিচ্ছে সেই বার্তায়। সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা গেছে, যেদিকেই চোখ যায় সারি সারি আমগাছে শুধু মুকুল আর মুকুল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, ভোলাহাট. শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও নাচোলসহ উপজেলার প্রতিটি বাগান যেন আলোকিত উজ্জ্বল সোনালি আলোয়।

কানসাটের আমচাষি গোলাম মোস্তফা জানান, এ বছর শীত ও কুয়াশায় মুকুলের তেমন ক্ষতি না হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন। মুকুলে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বাগানগুলোতে এখন স্প্রেসহ, পরিচর্যাসহ সেচ কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। তবে, গত বছরের তুলনায় এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি। শিবগঞ্জের বাগানমালিক সেতাউর রহমান জানান, মান নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারে প্রতিবছর আম উৎপাদনে পরিচর্যার খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা কয়েক বছর ধরে আমরা লাভবার হতে পারছি না।

তারপরও বংশ পরাক্রমে জাত ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা অন্য ব্যবসায় যেতে পারছি না। তাই জেলার আম অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সরকার আমশিল্পকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ হিসেবে আমের আচার, আমচুর, আমসত্ত, আমের জেলি, ম্যাংগোবার তৈরিতে উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং আম রূপ্তানি বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণের দাবি জানান। ভোলাহাটের আম ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন জানান, মুকুলের ক্ষতিকর পোকা দমন ও মুকুলগুলো যাতে ঝরে না পড়ে সেজন্য, বালাইনাশক স্প্রে, গাছের গোড়ায় পানি দেয়াসহ নিয়মিত পরিচর্যা করে যাচ্ছেন তারা।

এদিকে, শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম জানান, গত কয়েক বছর ধরেই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে এ জেলার আমশিল্প। এ অবস্থায় জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমবিজ্ঞানী ও কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের টেকসই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের দাবি এখন আম উদ্যোক্তাদের।

তিনি আরও জানান, এ অবস্থায় আমের গুণগতমান ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রূপ্তানিসহ আমের প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। অপরদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক, মান নিয়ন্ত্রণে না থাকায় কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারে ৪০ শতাংশ হারে প্রতিবছর আম উৎপাদনে পরিচর্যার খরচ বাড়ছে। তারপরও কৃষকরা মুকুল আসা থেকে আম উৎপাদন পর্যন্ত এত যত্ন আর কষ্টের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থেকেই যায়। তাই এ অবস্থায় আমের গুণগতমান ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে আম থেকে বিকল্প পণ্য উৎপাদনে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এই কৃষক নেতা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন আমবাগানে এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আর এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছগুলোতে আগেই দেখা মিলেছে মুকুলের এবং সামনের দিনে প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী আমচাষ ও বালাই ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে, পরিচর্যার খরচ সাশ্রয়ী হবে। আর সরকার “পাটনার” ও “রূপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প” এর আওতায় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে বিদেশে আর পাঠানো এবং আম প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এবছর চাষিরা আমের ভালো দাম পাবে, এ জন্য কৃষি বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান জানান, এ বছর ভালো ফলন পেতে এবং খরচ কমাতে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এখন তাপমাত্রা এবং পরিষ্কার আবহাওয়া বিরাজ করায় মুকুলে এক প্রকারের রোগ ‘মহা’ লাগার সম্ভাবনা কম। তারপরও কোন বাগানে ‘মহা’ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে, তাহলে আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকদের বালাইনাশক কীটনাশক গাছে স্প্রে করার জন্য পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে। তিনিও এ বছর আমের ভাল ফলনের আশাবাদ করেন।