ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৫ - ১:৪০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহীতে এসে যা বললেন আইন উপদেষ্টা, আইজিপি ও চিফ প্রসিকিউটর

  • আপডেট: Monday, February 24, 2025 - 9:10 pm

স্টাফ রিপোর্টার: অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমাদের ব্যর্থতা আছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের এই ব্যর্থতা উত্তরণের জন্য প্রচণ্ড তাড়না ও চেষ্টা আছে। আমরা চেষ্ট করছি। আপনারা জানেন যে, বিপ্লব উত্তর পরিস্থিতিতে পৃথিবীর কোনো দেশেই শাসনকার্য চালানো খুব সহজ ব্যাপার না।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর পিটিআই মিলনায়তনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমন না যে আমাদের খুব আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ আছে। আমাদের আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নাই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি গত ৬ মাসে মাঝে মাঝে ভালো হয়েছে। মাঝে মাঝে খারাপ হয়েছে। যখন খুব খারপ কিছু হয়। আমরা প্রচণ্ড আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখে পড়ি। খুবই খারাপ লাগে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন। আপনারা জানেন তাদের ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে কি ঘাটতি ছিল। তাদের দায়িত্বপালনে কিছু ব্যর্থতা থাকতে পারে। পুলিশ, বিচার প্রশাসন সবক্ষেত্রে আমরা বলতে চাই, আমরা ধ্বংস হওয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এটা বড় চ্যালেঞ্জ। যারা প্রকৃত ফ্যাসিস্ট শক্তি, তাদের অধিকাংশই তো দেশে থেকে গেছে। এদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকা। এটা তো বানানো কথা না। টাকা থাকলে, বদ মতলব থাকলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার মতো অনেক কিছু করা যায়। তাদের একটা রুল থাকতে পারে। আছেও বলে আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি। এছাড়া যারা স্বভাবগত অপরাধী তাদেরও ভূমিকা আছে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমরা অত্যন্ত একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। আমাদের ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দিয়ে একটা নতুন শাসন ব্যবস্থার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন রাষ্ট্র সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে সে সময় যে গণহত্যাগুলো হয়েছিল, সেটার বিচারের সুযোগ ও সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও এখানে অতীতে অনেক গায়েবি মামলা হয়েছে। আমরা সামগ্রিকভাবে দেখতে এসেছি, এখানে যারা স্টেক হোল্ডার আছে, ডিসি, ইউএনও, ওসি, পুলিশ প্রশাসন আছে, বিচারক ও আইনজীবীরা আছেন, তারা যেন সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শক্ত প্রমাণ আছে। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, তাদের ব্যাপারে যেন যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়। আবার কেউ যেন অযথা হয়রানির মধ্যে না পড়ে। উনারা যেন সবগুলো প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে একসঙ্গে জোরালোভাবে কাজ করতে পারে। মানবাধিকার রক্ষা করে বিচারের যে পরিস্থিতি, পরিবেশ সেটা সুনিশ্চিত করতে পারে। সেই লক্ষ্যে যেন কাজ করতে পারে। সেরকম দিক নিদের্শনা দেয়া। মতবিনিময় করে উনাদের সমস্যাগুলো শোনা। এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘একটা গোষ্ঠি চাচ্ছে না যে আমরা স্থিতিশিল হই। তারা চেষ্টা করছে। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’ পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ‘যারা ক্রিমিনাল, তারা হয়তো মনে করছে এখন তাদের ধরে আদালতে চালান দেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু হবে না। আমাদের যেটা করতে হবে, এই সরকারের প্রতিশ্রুতি, আমরা হিউম্যান রাইটস নিশ্চিত করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনব।’

রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ ছিনতাইয়ের বিষয়ে বাহারুল আলম বলেন, ‘শুধু গত রাতে নয়, আগের রাতেও বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা শনিবার সকালে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। র‌্যাব, এ্যান্টি টেররিজম ইউনিট ও ডিএমপি যৌথভাবে পেট্রোল প্রোগ্রাম করবে। এভাবে দেখি উন্নতি হয় কি না, নইলে আমাদের অন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’

ঢাকার অপরাধটা একটু আলাদা, সারাদেশের টপোগ্রাফির সঙ্গে মেলে না’ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘আমরা আপনাদের (সাংবাদিকদের) সহযোগিতা চাই। আপনারা আমাদের জানান। আমরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সহায়তা পাচ্ছি। আশা করি, পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ ‘অপারেশন ডেভিলহান্টে’ বড় অপরাধীর ধরা না পড়ার বিষয়ে আইজিপি বলেন, ‘কারা ধরা পড়ছে দেখেন। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়ছে। বিশেষত, জেলা পর্যায়ে ধরা পড়ছে।’

পরে পিটিআই মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ বিষয়ক এক কর্মশালায় যোগ দেন আইন উপদেষ্টা ও পুলিশ মহাপরিদর্শক।

কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই ডিসেম্বরে ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধানসহ শীর্ষ কয়েকজনের বেশ কয়েকটি মামলার বিচার শেষ হবে। মার্চে তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে এপ্রিলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, মার্চ মাসের মধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে যাবো। তদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার পরই আনুষ্ঠানিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। সুতরাং এপ্রিল বা মে মাস থেকে বিচারের ফুল সুয়িং অর্থাৎ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে যাবে। আমরা আশ্বস্ত করতে চাই জাতিকে, আগামী ডিসেম্বরের আগে বেশ কয়েকটি মামলার বিচারকার্য শেষ করা সম্ভব বলে আমরা আশা প্রকাশ করছি। সুতরাং দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘শুধু একজন মানুষকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করার জন্য, একটি পরিবারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বিচার ব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গ্রাউন্ডে যে পুলিশ গুলি করেছে সে তো কারো নির্দেশে গুলি করেছে। তাই তার আগে সেই প্রধানমন্ত্রীর বিচার করা হবে।’ চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কিছু মামলার বিচারের রায় হয়ে গেলে, পতিত সরকারের নেতাদের লাফালাফি ও দাম্ভিকতা বন্ধ হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এদিকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।

সোমবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে সোয়া ২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা তারা রাজশাহী পিটিআইয়ের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে শিক্ষার্থীদের পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের কথা শুনে অ্যাটর্নি জেনারেল তাদের আশ্বস্ত করেন, দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে মাঠে থাকা এই শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, তারা যেন সব ঘটনার সাক্ষী দেয়। তাহলে অপরাধীদের শাস্তি হবে।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা পিটিআইয়ের ফটক থেকে উঠে যান। এর আগে প্রায় দুই ঘণ্টা তারা পিটিআইয়ের ফটক দিয়ে কাউকে বের হতে দিচ্ছিলেন না। কেউ ঢুকতেও পারছিলেন না। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীরা ফটকে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগানও দিচ্ছিলেন।