নামের কারণে ১৮ বছর সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত চারঘাটের কলেজ

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম জড়িয়ে থাকায় ও তারেক রহমান পরিদর্শন করায় গত ১৮ বছরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার একটি কলেজে মেলেনি কোনো সরকারি বরাদ্দ। ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে কলেজটির ভাগ্যে এক টাকাও বরাদ্দ জোটেনি। ফলে সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
ভবন সংস্কারে বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে চিঠির পর চিঠি দিয়েও সাড়া মেলেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের এমনই বৈষম্যের শিকার হয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকার চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের শহিদ জিয়াউর রহমান কলেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৪ রুম বিশিষ্ট দোতলা প্রশাসনিক ভবন ও আধাপাকা একাডেমিক ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। দিন দিন কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এক সময় একাদশ শ্রেণিতে চার শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা নেমেছে ১৮২ জনে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রেণিকক্ষগুলোর দেয়ালের ইট খসে পড়ছে। মেঝেতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে ফাটল। বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষের জানালার গ্রিল ও কপাট ভাঙা। টিনের চালা ফুটো হয়ে গেছে। শ্রেণিকক্ষগুলোতে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ, বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা। ছোট ছোট ক্লাসরুমে গাদাগাদি হয়ে শিক্ষার্থীরা বসে ক্লাস করছে। শহিদ জিয়াউর রহমান কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে কলেজটি স্থাপন করা হয়।।
পাঠদান শুরু হয় টিনশেড ভবনে। ২০০২ সালে এটি কলেজ হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। ২০০৪ সালে তারেক রহমান কলেজটি পরিদর্শনের পর ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে কলেজে চার রুম বিশিষ্ট দোতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ হয়। এর পর থেকে ওই কলেজে আর কোনো ভবন সংস্কার হয়নি। কলেজটিতে ২০ জন শিক্ষক ও ১১ জন কর্মচারী রয়েছেন।
কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনিম তয়া বলেন, প্রতিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান মেলাসহ যাবতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু আমরা কখনও আগমন পাই না। এমনকি খেলার সামগ্রীও আমাদের কলেজেরগুলো অন্য কলেজে বরাদ্দ দেয়া হয় বলে শুনেছি। মেট্রোপলিটন এলাকায় এ রকম অবহেলিত প্রতিষ্ঠান হয়তো আর কোথাও নেই।
কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবিনা খাতুন বলেন, জানালার কপাট না থাকায় ও টিনের চালা ফুটো থাকার কারণে বর্ষা মৌসুমে শ্রেণিকক্ষে বৃষ্টির পানি ঢোকে, শীতকালে হিমেল হাওয়া বয়ে যায়। প্রাচীর না থাকায় বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা হরহামেশা। স্যাররাও অসহায়, কোনো সমাধান দিতে পারেন না।
আওয়ামী লীগ সরকারের বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে কলেজের গণিত বিভাগের জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক আব্দুল আলীম বলেন, শিক্ষার্থীদের আমাদের কলেজে ভর্তি হতে নিরুৎসাহিত করতো আ’লীগের নেতাকর্মীরা। বলা হতো সার্টিফিকেটে ওই কলেজের নাম থাকলে কোথাও চাকরি হবেনা। প্রতিটি কলেজে নতুন ভবন, ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটাল ক্লাসরুম থাকলেও উপজেলার মধ্যে এই একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানে এমন কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি।৷ শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন থেকে ১ হাজার টাকা করে তুলে কলেজের উন্নয়নের কাজে ব্যায় করা হয়।
কলেজের অধ্যক্ষ আয়েন উদ্দিন বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতি সাথে জড়িত না। কিন্তু কলেজটি জিয়াউর রহমানের নামে তারপর আবার তারেক রহমান ২০০৪ সালে কলেজটি পরিদর্শন করেছিল। এজন্য গত ১৮ বছর ধরে আমরা অবহেলিত। শিক্ষক-কর্মচারীরা কলেজের পরিচয় দিতেও ভয় পেত। মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টাও করা হয়েছে। শত বঞ্চনার পরেও আমরা কলেজটি টিকিয়ে রেখেছি।
এখন নির্দলীয় সরকারের কাছে আমাদের দাবি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে যেনো ভবন ও আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করে কলেজটির শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোহেল হোসেন বলেন, কলেজটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত প্রতিষ্ঠান। কোনো প্রকার বরাদ্দ সেখানে দেয়া হয়নি। এজন্য আধুনিক ভবন ও ডিজিটাল ল্যাবসহ যাবতীয় বরাদ্দের তালিকায় চাহিদার প্রথম নামটি ওই কলেজের রাখা হয়েছে। খুব দ্রুতই শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ সেখানে তৈরি হবে বলে আশা করছি।