ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২৫ - ২:২৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, দূষণ হচ্ছে পরিবেশ দখল আর দূষণের কবলে বড়াল

  • আপডেট: Thursday, February 20, 2025 - 6:00 pm

সোনালী ডেস্ক: প্রতিনিয়ত গ্রাস করা হচ্ছে বড়ালকে। দখল আর দূষণের কবলে পড়ে বড়াল তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বড়ালের পানি পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। চরম দুর্গন্ধের কারণে বড়াল পাড়ের মানুষের টেকা দায় হয়ে পড়েছে। তাদের এখন ত্রাহি অবস্থা। আক্রান্ত হচ্ছেন নানা রোগে। এই দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণের উপায় মিলছেনা তাদের। বড়াল পাড়ের মুরগি আর গরুর খামারের বিষাক্ত বর্জ্যসহ পৌরসভার নানা এলাকার বর্জ্য নির্বিঘ্নে ফেলা হচ্ছে এই বড়াল নদে। বড়াল নদের এখন করুণ দশা। দখল আর অবর্ণনীয় দূষণের কারণে বড়াল তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

এককালের প্রমত্ত বড়ালকে এখন আর চেনা যায় না। শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই শুকিয়ে গেছে নদটি। নদের তলদেশে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের। নদের পাড় দখল করা হচ্ছে অহরহ। তৈরি করা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। দখল আর দূষণের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বড়াল রক্ষায় গড়ে ওঠা বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। মাঝে মধ্যে নাকি দু’একটা সভা করে তারা আন্দোলন জোরদার করার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবটা ভিন্ন। বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীরা এখন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে নানা কারণে। সম্প্রতি উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় বড়াল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী। এদিকে বড়াল নদের চাটমোহর নতুন বাজার এলাকায় ব্যবসায়ী শামসুল হক বড়াল নদ দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এ ব্যাপারে বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিচালনা পরিষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বড়াল নদ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ইতিপূর্বে একই অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান বলেন,বড়ালের দখল আর দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আমরা এই দখল আর দূষণের প্রতিবাদে শীঘ্রই কর্মসূচি দেবো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী জানান,বড়ালের দখল আর দূষণরোধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। দূষণকারীদের সাথে আলোচনা করা হবে। দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজশাহীর চারঘাটের পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি বড়াল গিয়ে মিশেছে যমুনায়। বড়ালকে বিভিন্ন সময় ধ্বংস করা হয়েছে। ২০০৮ সালে গড়ে ওঠা বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম,গণসংযোগের কারণে সরকার বড়ালের উপর দেয়া ক্রস বাঁধ অপসারণ করে। তুলে দেয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও। নানা রকম জরিপ,বড়াল নিয়ে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনসহ নানাভাবে বড়াল নদে নাড়াচাড়া করা হয়। প্রস্তবনাও দেয়া হয় সরকারের কাছে। পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বড়াল রক্ষার জন্য হাইকোর্টে রিটপিটিশনও দায়ের করেন।

কিন্তু বড়াল অবমুক্ত কিংবা খনন কাজ করার জন্য আজও কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। কবে নাগাদ বড়াল অবমুক্ত হবে কিংবা খনন হবে,তা কেউই জানেন না। দখল আর ভয়াবহ দূষণ রোধে বড়াল রক্ষা আন্দোলনের যেমন কোন কর্মসূচি চোখে পড়ছে না, তেমনি দখল-দূষণরোধে সংশ্লিষ্টদেরও কোন মাথাব্যথা নেই। বড়াল পাড়ের মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও ক্ষোভ নিরসনের কোন কার্যক্রম নেই। এ অবস্থায় দখল আর দূষণের কারণে হয়তো বড়াল একদিন তার অস্তিত্ব হারাবে বলে অভিমত এলাকাবাসীর।