ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২৫ - ১২:১২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

বড়পুকুরিয়া খনির এমডি’র দুর্নীতি তদন্ত করছে পেট্রোবাংলা

  • আপডেট: Sunday, February 16, 2025 - 8:59 pm

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আব্দুল মান্নান পাটওয়ারীর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন-পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক (জিএম-পরিকল্পনা কৌশল) প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ সাহা, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম-অর্থ) শাহীন উদ্দিন প্রামানিক ও ডিজিএম (উৎপাদন ও বিপণন) ড. বেলায়েত হোসেন।

অভিযোগগুলো থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব দেয়া হয় সাইফুল ইসলামকে। খনি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে সাইফুল ইসলাম এক সময় ইঞ্জিনিয়ার টু কন্ট্রাক্ট এর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু হাসিনা সরকার তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্বেও বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় শাস্তিমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে সাইফুল ইসলামকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্নাঙ্গ এমডি করেছে।

বড়পুকুরিয়া খনির বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ১ হাজার কোটির টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী থাকা সত্বেও তিনি ওই ব্যাংকে ২০২৩ সালে আরও ২ কোটি টাকা এফডিআর করেন। এছাড়া বিধি বহির্ভূতভাবে বেসরকারী চারটি ব্যাংকে প্রায় ১শ সাড়ে ১৭ কোটি রেখেছেন। ব্যাংক চারটি হলো- ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্যোসাল ইসলামি ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক।

ব্যাংক খেকো এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসব ব্যাংকে রক্ষিত আনামত এখন ঝুকির মুখে। ছয়মাস মেয়াদী এসব স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা ও নবায়নের ক্ষেত্রে তিনি একটি নির্দিষ্ট হারে কমিশন গ্রহণ করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কমিশন গ্রহণের কথা অস্বীকার করে এমডি জানান- উপরমহলের চাপে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর স্থানান্তর করা হয়।

খনির ২৪ তম বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) ব্যয় দেখানো হয় ৩৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে খনির ১৮২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকার বিছানার চাদর ও ছাতা ক্রয় দেখানোসহ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিছানার চাদর বা ছাতা দেয়া হয়নি। এসব বিলের ভাউচারগুলো এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভাউচারগুলো যাচাই করে দেখা যায়- যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল ক্রয় করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব নেই।

আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ২৫ জনকে মোটা অঙ্কের উৎকোচ বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিধি অনুযায়ী কোম্পানীর প্রফিট বোনাসের টাকা এমডি’র পাওয়ার কোন সুযোগ না থাকা সত্বেও তিনি চাপ প্রয়োগ করে প্রফিট বোনাস হাতিয়ে নেন। ডেব্রিস (উঊইজওঝঝ- খনি ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত লোহা, কয়লা মিশ্রিত একধরনের পাথর) বিক্রিতে অভিনব কায়দায় কমিশন আদায়ের ও অভিযোগ উঠেছে। যা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়। এমডি সাইফুল ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান এই টাকা কালেকশন করে যা ওপেন সিক্রেট।

এমডি সাইফুল ইসলামের ব্যক্তিগত একটি ব্যাংক হিসাব (সোনালী ব্যাংক, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শাখা) নম্বরে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। কয়েক বছরে ওই ব্যাংকের একটি হিসাব নম্বরে এক কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশী শুধু নগদ অর্থ জমা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয় প্রধান উপদেষ্টা ও জ¦ালানি উপদেষ্টার দপ্তরেও। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) মোঃ আব্দুল মান্নান পাটওয়ারীকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পেট্রোবাংলা। ২০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধি তা দেওয়া হয়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) মোঃ আব্দুল মান্নান পাটওয়ারী জানান, তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। এমডি প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার অভিযোগগুলো অস্বীকার করে জানান, আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে উপরমহলের মৌখিক নির্দেশনায়। কোন উৎকোচের বিনিময়ে নয়। কোম্পানীর ২৪ তম এজিএম-এ কেনাকাটাসহ যাবতীয় ব্যয় ও কার্য সম্পাদনের জন্য ৫ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করে এবং অনিয়ম দুর্নিতিসহ বিভিন্ন তথ্যর বিষয় সম্প্রিতি এ প্রতিবেদক স্ব-শরীরে তার মুখোমুখি হলে তিনি বিভ্রত হন এবং সব বিষয় এড়িয়ে গিয়ে অন্য দিকের কথা তুলে ধরেন।