ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২৫ - ৩:০২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

দেড়শ বছর পর শুরু হল রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজের সংস্কার কাজ

  • আপডেট: Sunday, February 16, 2025 - 9:00 pm

পাবনা (ঈশ্বরদী) প্রতিনিধি: ব্রিটিশ আমলের ১৮৭৪ সালের কথা। ওই সময়েই ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর রেলরুট দিয়ে ‘দার্জিলিং মেইল’ নামে একটি ট্রেন চলাচল করতো। নিরাপদে ট্রেন চলাচলের জন্য তৎকালীন ব্রিটিশের প্রকৌশলীরা ২১৪ নম্বর রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণ করে। ব্রিজটি নির্মাণের পর আর সংস্কার করা হয়নি।

১৫০ বছর পর সংস্কার কাজ শুরু করছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ। সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ওই রেল ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিনই ৪৪টি যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেন সারাদেশে চলাচল করে।

রোববার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় রেলওয়ের কর্মচারীরা ঈশ্বরদী-আবদুলপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে বেডব্লক ভেঙে লোহার সিসিক্রিপের ওপর লোহার গার্ডার বসিয়ে ডাউন লাইন নির্মাণ করে। অতঃপর অস্থায়ী লাইনটি তৈরির পর চিলাহাটি থেকে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস পার করা হয়।

৮ স্প্যানের ৭ নম্বর পিলারের ওপরে ১৬০ ফুট লম্বা ডাবল লাইনের রেল ব্রিজটি ইটের মাঝে চুন-সুড়কির গুনাগন নষ্ট হয়ে পিলার-বেডব্লকে ফাটল ধরেছিল। ট্রেন চলাচলে যেন বিঘ্ন না ঘটে এজন্য আপ লাইন দিয়ে সব যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করানো হচ্ছে। তার আগে গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) আপ লাইনের অস্থায়ী রেললাইন নির্মাণ করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন-পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সেতু প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন, পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল, সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর, পাকশী বিভাগীয় সহকারী সেতু প্রকৌশলী মামুন উর রশীদ, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেতু) হাসান আলী, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) ভবেশ চন্দ্র রাজবংশী, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আতিকুর রহমান প্রমুখ।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেতু) হাসান আলী গণমাধ্যমকে জানান, ব্রিটিশ আমলের ব্রিজটি ২৩ ফুট করে ৮টি গার্ডারের ১৮৪ ফুট লম্বা রেল ব্রিজ। ৮ স্প্যানের ওপরে ৭ পিলারের ১৬০ ফুট লম্বা ব্রিজটির চুন-সুড়কির গুণাগুন নষ্ট হয়ে গেছে। ট্রেন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে ২০৪ নম্বর ব্রিজে ক্ষতিগ্রস্ত ইটের দেয়াল ও আরসিসি বেডব্লক ভেঙে নতুনভাবে পুনরায় ইটের দেয়াল ও বেডব্লক তৈরি করা হবে।

পাকশী সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাফর জানান, ব্রিজে ট্রেন ওঠার আগে শূন্য কিলোমিটার গতিতে এসেই ট্রেনগুলো থেমে যাচ্ছে এখন। ওটিপিতে ট্রেন চালকের স্বাক্ষরের পর অস্থায়ী রেললাইন দিয়ে ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনগুলো পারাপার করা হচ্ছে। সংস্কার শেষ হলে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ বীরবল মণ্ডল গণমাধ্যমকে জানান, গার্ডার ব্রিজ তৈরি হওয়ার পর আর সংস্কার হয়নি।

দেড়শ বছর আগে ইটের মাঝে চুন-সুড়কি দিয়ে তৈরি গার্ডার রেল ব্রিজটি। ব্রিজটির ওপর দিয়ে ৪৪ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন যাতায়াত করে। অতিরিক্ত এবং ভারি ট্রেন চলাচলের কারণে ব্রিজটি নির্মাণের সময় যতটুকু ধারণক্ষমতা ছিল এখন এক্সেল লোড নেওয়ার মতো আর ক্ষমতা নেই। পিলার-বেডব্লকে ফাটল ধরেছিল।

প্রকৌশলী বীরবল মণ্ডল গণমাধ্যমকে আরও জানান, ১ কোটি ৯৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ব্রিজের সংস্কার চলছে। ডাবল লাইনের রেললাইন এটা, বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আশা করা হচ্ছে আগেই কাজ শেষ করা হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী, আসাদুল হক আসাদ গণমাধ্যমকে জানান, ভ্রমণপ্রিয় ট্রেনের যাত্রীরা যেন নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে সেজন্য ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোকে সংস্কার করা হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ রেলওয়ে ব্রিজগুলো আগে সংস্কার করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সেই দেড়শ বছর আগে ১৮৭৪ সালে ট্রেন চালু হওয়ার পর ভারতের জলপাইগুঁড়ি, দার্জিলিং, শিয়ালদহে ট্রেন চলাচল করত। সে সময় দার্জিলিং মেইল নামে একটি ট্রেন এ রুটে চলাচল করত। ওই সময় ব্রিজটি নির্মাণ করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। গত ৩ জানুয়ারি ‘ঝুঁকিপূর্ণ রেলওয়ে গার্ডার ব্রিজে থেমে যায় ২২ জোড়া ট্রেন’ শিরোনামে বাংলানিউজে সংবাদ প্রকাশিত হয়।