বদলগাছীতে হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তোলা হচ্ছে পাকা ঘর

সংকীর্ণ হচ্ছে জায়গা:
বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছীতে অবৈধভাবে হাটের জায়গা দখল করে পাকা দোকান ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ফারুক আহাম্মেদ ও রাজু আহাম্মেদ নামের দুই ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে জোর করে অবৈধভাবে এই হাটের জায়গা দখল করে পাকা ঘর নির্মাণ করছে। উপজেলার পাহাড়পুর হাটের মাছবাজারের পাশে এই ঘরগুলো নির্মাণ হচ্ছে।
এ বিষয়ে আহসান হাবিব ভুটু নামে এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ একাধিক জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দেয়ার পর এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফারুক আহাম্মেদ ও রাজু আহাম্মেদ আপন দুই ভাই। তারা পাহাড়পুর ইউপির গোয়ালভিটা গ্রামের আলেফ আহাম্মেদের ছেলে। বদলগাছী উপজেলার ৩ নং পাহাড়পুর ইউনিয়নের একমাত্র বড় হাট গোয়ালভিটা মৌজার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর হাট। সেখানে প্রতি সপ্তাহে রোববার ও বুধবার হাট বসে। অত্র ইউনিয়নে আর কোন বড় হাট না থাকায় এই হাটে লোকজনের সমাগম হয় অনেক বেশি। সকল কৃষকদের পণ্য বিক্রির একমাত্র জায়গা এই হাট। বিগত সময়ে হাট ইজারাদার, স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মদদে, হাটের সভাপতিকে ম্যানেজ করে প্রথমে হাটের জায়গা দখল করে টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরি করে এবং পরবর্তীতে ওই টিনের ঘরের জায়গায় নির্মাণ করা হয় ইটের পাকা ঘর।
এদিকে অপরিকল্পিতভাবে এসব দোকান ঘর তৈরিতে দিনদিন ছোট হয়ে যাচ্ছে হাটের জায়গা। আবার যেসব যায়গায় দোকান হচ্ছে সেসব দোকানের পিছনে হাটের জায়গার পাশাপাশি অনেকের মালিকাধীন জায়গাও আছে। সরেজমিনে পাহাড়পুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের কাঁচাবাজার, মাছ বাজারের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অনেক দোকান পাট। টিনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ইটের পাকাঘর। আবার কেউ টিনের ঘরের মধ্যে নতুন করে নির্মাণ করছে ইটের ঘর।
স্থানীয়রা জানান, বিগত সময়ে হাট-বাজারের সভাপতি ও এলাকার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে প্রথমে টিন দিয়ে ঘিরে দোকানঘর তৈরি করে। পরে সুযোগ বুঝে টিনের ঘরের ভিতর নির্মাণ করা হয় ইটের পাকাঘর। হাটের মাছ বাজারের পাশে ৩টি দোকানের জায়গা দখল করে পাকাঘর তৈরি করেছে। কিন্তু দখলকৃত হাটের জায়গার পিছনেই ওই ব্যক্তির নিজস্ব জায়গা রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তারপরও তিনি নিজের জায়গা বাদ দিয়ে হাটের জায়গা দখল করে বসে আছেন। আর এভাবেই একের পর এক হাটের জায়গা দখল করছে।
পলাশ নামে এক ব্যক্তি বলেন, আগে হাটে এসে ফাঁকা জায়গায় সাইকেল, ভ্যান রেখে বাজার করতাম। কিন্তু এখন সাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যান রাখার কোন জায়গা নেই। হাটের ফাঁকা জায়গাগুলোতে অবৈধভাবে দোকান ঘর নির্মাণ করে দিন দিন জায়গা ছোট করছে। এদের অনেকের হাটের জায়গার পিছনে নিজের জায়গা আছে, কিন্তু তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মদদে অবৈধভাবে দোকান ঘর তৈরি করে জায়গা দখল করছে। আমরা এলাকাবাসী হাটের জায়গা ফাঁকা চাই। এসব অবৈধ দোকান দদ্রুতই অপসারণ চাই।
হাটের জায়গায় অবৈধ্যভাবে দোকান ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে রাজু আহাম্মেদ এর সাথে কথা বললে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আপনি সরাসরি এসে আমার ছবিসহ নিয়ে যান। তবে তিনি হাটের জায়গায় ঘরটি নির্মাণ করছে স্বীকার করে বলেন, হাটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানে। তারা অনুমতি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে ঘরটাতে ব্যবসা করে খাচ্ছি। আমার ঘরটা পিছনে, সবার শেষে। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই পাকা ঘর করছি। ওই জায়গাটা একটু পাকা করে সাটার সিস্টেম করতে যাচ্ছি। তবে সরকার যখন চাইবে বা ভেঙে দিবে, তাতে আমার কোন আপত্তি নেই। অভিযোগকারী আহসান হাবিব ভুটু বলেন, তারা দুই ভাই অবৈধভাবে হাটের জায়গা দখল করে তিনটি দোকান নির্মাণ করছে। এতে হাটের জায়গার পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেছি যেন হাটের জায়গা উদ্ধার করা হয়। পাহাড়পুর হাটের সভাপতি ও পাহাড়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর বলেন, এ বিষয়ে আমি জানি না। তবে খোঁজ নিচ্ছি। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কিনা বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।