ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২২, ২০২৫ - ৩:০১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’: দেশজুড়ে গ্রেপ্তার এক হাজার ৩০৮

  • আপডেট: Sunday, February 9, 2025 - 11:00 pm

সোনালী ডেস্ক: সারা দেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে এক হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রোববার পুলিশ সদর দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়াও ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কেন শুরু হয়েছে; তার ব্যাখ্যা করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি। অন্যদিকে, যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ততক্ষণ ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, গত শনিবার রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত এক হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর এলাকায় ২৭৪ জন এবং রেঞ্জে এক হাজার ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর কারণ ব্যাখ্যা: ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি বলেছেন, বিপ্লব যে দেশে হয়, সেদেশে ‘পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না’। তবে বাংলাদেশে সরকার ‘অতটা অমানবিক’ হতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, দেশকে যারা অস্থিতিশীল করার করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধেই ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালিত হচ্ছে।

“আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি, তার অনেকগুলো চলমান রয়েছে। আগামীতে তার কিছুটা আমরা রিভিউ করতে যাচ্ছি। তার একটা যেটা কালকে হয়েছে ডেভিল হান্ট অপারেশন। “যেখানে যৌথভাবে সকলে ফোকাসড ওয়েতে কিছু কাজ করবে। যেসব কাজের মধ্যে দেশের স্টেবল অবস্থাকে আনস্টেবল করার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটাকে আমরা নিউট্রালাইজ করব। এর জন্য আইনানুগ পন্থায় যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটা নেব।”

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশে গত শনিবার থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের এ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের সমন্বয়ে এ অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন।

রোববার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এস এ অভিযান নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে দেশে বিপ্লব হয়েছে সে দেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না। অতটা অমানবিক হতে পারেনি সরকার। আমরা কিছুটা রিফর্ম করেছি। কিছুটা রিয়ালাইজ করেছি যে কিছু লোক ভয়ে (গত সরকারের কর্মকাণ্ড সমর্থন) করেছে, প্রেসারে করেছে, বিভিন্ন কারণে করেছে। কিছু ডাইহার্ড ছিল তারা পালিয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে।”

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কেন প্রয়োজন হল জানতে চাইলে সচিব বলেন, “এখন দেখা গেল র‌্যানডম শুরু হয়ে গেছে দেশকে আনস্টেবল করার চেষ্টা। এই জিনিসটা যেন না থাকে। যাতে মানুষের মনকে উদ্বেলিত না করে, সেজন্য এই প্রচেষ্টা। আরেকটু ফোকাসড ওয়েতে।” অপারেশন ডেভিল হান্টের নেতৃত্বে কারা থাকবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে নাসিমুল গনি বলেন, “এটা পুলিশ অ্যাকশন। এটা পুলিশের কাজ হচ্ছে। আর্মি হেল্প করছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ও যৌথবাহিনীর অভিযান একসঙ্গে চলছে।”

তবে অভিযান শুরুর পর কত জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি। অভিযানের নামকরণ নিয়ে এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র সচিব ভাষ্য, “প্রত্যেকটা অপারেশনের একটা কোড নেইম হয়। ফোকাস করার জন্য। পুলিশের এবং ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে সেই ক্ষমতাই ডেভিল হান্ট অপারেশনে প্রয়োগ করা হচ্ছে।” অপারেশনে পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, “এদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।”

অভিযানের কর্ম পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “আগে যে আকারে আইন প্রয়োগ করা হত, আমরা ওই পথে হাঁটতে পারব না। আমাদেরকে আইনের স্পিরিট নিয়ে কাজটা করতে হবে। “আইন প্রয়োগের সাথে যারা জড়িত আছেন, যেমন পুলিশ বাহিনী, ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রসিকিউটর, উনাদের সাথে একত্রে বসব, কীভাবে আমরা সুষ্ঠুভাবে আইনটা প্রয়োগ করতে পারি।” অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পাওয়া নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “অনেক লোক মনে করেছে ওই সময় বের হলে আমার অসুবিধা হবে। কিন্তু এখন যারা সাজা খেটে বের হয়েছে তারা ২৫ বছর ২০ বছর জেলে থেকেছে। হতে পারে সন্ত্রাসী এখনও হতে পারে হয়ত। যদি সেরকম কোনো অ্যাকশন হয় তাহলে ধরব।”

স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “আমাদের দেশে যে পরিবর্তন এসেছে আইন-শৃঙ্খলা ক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণেই সেনাবাহিনী সারাদেশে মোতায়েন করা হয়। পুলিশ বাহিনীর মোরাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, মানসিক দুর্বলতা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়েছে। বিভিন্ন থানা পুড়ে গেছে এ সমস্ত কারণেই সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে।” এসব কাজ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিটি বাহিনী প্রস্তুত করা হয়েছে বলে সচিবের ভাষ্য। মানবাধিকার এবং পরিবেশ নিয়ে মঙ্গলবার একটি কর্মশালা হবে, সেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানান সচিব।

তিনি বলেন, “এই মানবাধিকার কারণেই আমাদের আন্দোলনটি হয়েছিল।” পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ পুলিশ সদস্যদের ‘ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন’- এমন খবর শোনার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন এক সাংবাদিক। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করছে, তা তিনি জানতে চান। জবাবে সচিব বলেন, “আমরা দেখছি।” তবে সঙ্গে এও বলেন, “সব কথা বলা যাবে না।”

ডেভিল’ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ততক্ষণ চলবে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা। গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনার পর সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী ছাড়াও পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোস্ট গার্ড সদস্যদের সমন্বয়ে এ অভিযান চালানো হবে বলে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন। এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে, সেই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী এবং সন্ত্রাসী, তারাই এটার টার্গেট।”

অপারেশনে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওইটা আপনাদের মিডিয়ায় চলে আসছে।” গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, গাজীপুরে যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অনেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যাদের আনা হয় নাই, তাদেরও খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা হবে এবং তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়, এই ব্যবস্থা করা হবে। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে গাজীপুর নগরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঠেকাতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন। পরে সেখানে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা চালায়। ওই হামলার প্রতিবাদে গত শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটি গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে নগরের ভাওয়াল রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা।

এ সময় আন্দোলনকারীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয় সেখানে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছি। সেই অভিযান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকায় ২০০৩ সালের ৯ জানুয়ারি সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ব্যারাকে ফিরে যায় সেনাবাহিনী। প্রায় চার মাসের ওই অভিযানে অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় বলে সেসময় এবং পরে সংবাদমাধ্যমের তথ্যে উঠে আসে। তবে তাদের বেশির ভাগই হৃদরোগে মারা গিয়েছিলেন বলে সেসময় যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। ওই অভিযানকে দায়মুক্তি দিতে ২০০৩ সালে করা হয় ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি আইন’। এর প্রায় এক যুগ পর ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়মুক্তির আইনকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট।