ঢাকা | মে ১৪, ২০২৫ - ৪:৪৩ পূর্বাহ্ন

পোরশায় মাটি খনন করলেই মিলছে মূল্যবান জিনিস!

  • আপডেট: Sunday, February 9, 2025 - 7:00 pm

পোরশা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের মাটি যেন সোনার চেয়েও খাঁটি হয়ে গেছে। নিতপুর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া পূনর্ভবা নদীর পূর্ব পাশে নদীর তীর ঘেষা ওই গ্রামের আশেপাশে যে কোন জায়গা খনন করলেই মিলছে নানা প্রকার মূল্যবান ধাতব দ্রব্য, ছোট পাথর ও তৈজসপত্র। এভাবে বিগত ১৪-১৫ বছর ধরে অর্ধশতাধিক লোক দিনের পর দিন দল বেঁধে প্রতিনিয়িত মাটি খনন করছেন।

বহুল আলোচিত মাটি খনন করে বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব দ্রব্য পাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং পাহাড়পুর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানলেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অনেকে বলছেন। এ ঘটনায় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মূল্যবান ওইসব ধাতব সম্পদ উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরজমিনে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগে স্থনীয় এক ব্যক্তি টেকঠা গ্রামের এক জমিতে মাটি কাটতে গিয়ে কিছু মূল্যবান ধাতব দ্রব্য পান। এ রকম খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা মাটি খননের কাজ শুরু করেন। সে থেকেই প্রতিদিন স্থানীয়রা যে যার মত কোদাল, খুনতি, শাবল দিয়ে মাটি খনন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। প্রায় পাঁচ থেকে আট ফিট মাটি খনন করলেই মিলছে মূল্যবান জিনিস। পাওয়া যাচ্ছে ছোট বড় অনেক রকমের পাথরসহ মূল্যবান সম্পদ।

পয়সা, তাবিজ, তস্বি দানা, পাথর, ছোট-বড় পাথরের বল ইত্যাদি। এগুলোর বিভিন্ন রং এর। লাল, কাল, সাদা, কমলা, সবুজ এবং কতগুলো গোলাপী রং এর। অনেক সময় অনেকে স্বর্ণও পেয়েছেন বলে জানা গেছে। আর স্বর্ণ বিক্রি না করে অনেকে নিজের কাছে রেখে দিচ্ছেন। আর ছোট-বড় পাথর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেয়া হয়। ক্রেতারা খবর পেয়ে এসে তাৎক্ষণিক দ্রব্যগুলো কিনে নিয়ে যান। পাথর গুলো রকম ও ওজন ভেদে প্রায় ১২-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

তারা বলছেন, প্রাপ্ত দ্রব্য গুলোর গুণগত মান অনুযায়ী ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, বিগত সময়ে এ এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত। নদির তীর হিসেবে এখানে হাট-বাজার বসত। এখানকার হাট-বাজারসহ স্থানীয় হিন্দুরা বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়ায় হয়ত তাদের মূল্যবান অনেক জিনিসগুলো নিয়ে যেতে পারেনি। ফলে তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে জিনিসগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বলছেন তারা।

এলাকাবাসি অনেকে জানান, যে এলাকায় জিনিসগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেই জায়গায় হাট বাজার বসতো। যার প্রমাণ স্বরূপ কালিদহ বলে একটি কূপ আজও বিদ্যমান আছে নদীতে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এখানে বসবাসকারী অনেক জমিদার এবং সম্পদশালী হিন্দু পরিবার সবাই ভারতে চলে যান। বলা যায় এ এলাকা ছিল সম্পদশালী হিন্দুদের আশ্রয়স্থল। কাজেই তাদের ব্যবহৃত বহু মূল্যবান জিনিসপত্র এখানে থেকে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মাটি খনন কাজে নিয়োজিত পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, বেশ কিছুদিন থেকে মাটি খুড়ছেন। সেখানে একটি জালিবল পেয়েছেন। এছাড়াও অনেকে বোতাম, মার্বেল, জালি পোটল, ফুটবল, গোলাপি বল পেয়েছেন। এগুলো পাঁচশত টাকা থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকায় তারা বিক্রি করেছেন বলে জানান। এছাড়াও সংবাদ পেয়ে অন্য এলাকা থেকে এসে ক্রেতারা দ্রব্যগুলো কিনে নিয়ে যায় বলে জানান।

তবে পাথরসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রি করলেও মাটি খনন করে পাওয়া স্বর্ণালঙ্কার কেউ বিক্রি করেন না। নিতপুর গ্রামের আমির উদ্দিন জানান, বিগত ১৪-১৫ বছর থেকে অনেক মানুষ মাটি খনন করে মাটির নিচে থাকা মূল্যবান ধাতবদ্রব্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তুলে নিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এগুলো উত্তোলন বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

মূল্যবান সম্পদগুলো উত্তোলন বন্ধ করা দরকার। তবে সরকারি উদ্যোগে খনন কাজ চালিয়ে মূল্যবান দ্রব্যগুলো উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলেও তিনি মনে করছেন। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে পাহাড়পুর যাদুঘরের কাস্টডিয়ান ফজলুল করিম জানান, প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে এ উপজেলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এলাকাটি তারা অনেকবার পরিদর্শন করেছেন।

এখানে খনন কাজ বন্ধ করার জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কর্তৃপক্ষকে পত্র দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না গ্রহণ করলে তাদের করার কিছু নেই বলে তিনি জানান। তবে তারা আবারও বিষয়টি ব্যাপারে প্রত্নত্ত্ব অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS