ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৫ - ৭:৪৮ অপরাহ্ন

রাজশাহীর যে উপজেলায় সব বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার

  • আপডেট: Sunday, February 9, 2025 - 9:10 pm

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন শহিদ মিনার। এর আগে বিদ্যালয়গুলোতে আগে শহিদ মিনার ছিল না। ফলে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

উপজেলার শিক্ষা অফিসের উদ্যোগে ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এসব শহিদ মিনার। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজস্ব শহিদ মিনারে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে আগে কোন শহিদ মিনার ছিল না। ফলে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা, জাতীয় শহিদ দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে এসব শিক্ষার্থীকে যেতে হতো অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ী ভাবে শহিদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করা হতো।

২০২১ সালে উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন মকলেছুর রহমান। তিনি এরপর পরিকল্পনা করেন সব স্কুলে শহিদ মিনার তৈরির। সরকারি কোন বরাদ্দ নয়, স্কুলের নিজস্ব ফান্ডের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৩টি স্কুলে নান্দনিক শহিদ মিনার তৈরি উদ্যোগ নেন তিনি। এরপর গত তিন বছরে ক্রমান্বয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সব বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার।

প্রতিটি স্কুলের শহিদ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৭০ হাজার মধ্যে। গতকাল রোববার সরেজিমনে উপজেলার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে বেশ নান্দনিকভাবে তৈরি করা হয়েছে শহিদ মিনার। প্রতিটি শহিদমিনারে সাদা ও লাল রঙ করা হয়েছে। নিচে রয়েছে কালো রঙের টাইলস। শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে নান্দনিক শহিদমিনার দেখে উচ্ছ্বাসিত।

পৌর এলাকার রৈপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রিমি খাতুন বলেন, আগে বিদ্যালয়ে শহিদমিনার ছিল না। তাই উপজেলা সদরে গিয়ে শহিদদের স্মরণে ফুল দিয়ে আসতাম। এখন আর যাওয়া লাগে না। আমাদের বিদ্যালয়েই শহিদ হয়েছে। আমরা এখানেই ফুল দেই।

দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফিজা খাতুন বলেন, শহিদ মিনার না থাকায় বিভিন্ন দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে বাহিরের প্রতিষ্ঠানে যেতে হতো অথবা অনেক সময় আবার আমরা নিজেরাই অস্থায়ী শহিদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতাম। এখন থেকে আমরা বিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে পারি। সিংগা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাক্তিবুল ইসলাম জানান, আগে বিদ্যালয়ে কোন শহিদ মিনার ছিল না।

ফলে অনেক বিদ্যালয়ে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার হওয়ায়, শিক্ষক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি। তিনি বলেন, তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার তৈরির উদ্যোগ নেন। তারপর থেকে একে একে প্রতিটি বিদ্যালয়ে কাজ শুরু হতে থাকে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড হতে এসব শহিদ মিনার তৈরি করা হয়েছে।

দুর্গাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, এটা খুবই ভাল উদ্যোগ। উপজেলার সব বিদ্যালয়ে এখন শহিদ মিনার। এতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত হবে। তৎকালীণ শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহিদ মিনার তৈরির উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন। সেটা এখন সফল ভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড (তহবিল) থেকে শহিদ মিনার তৈরি হয়েছে।