ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৫ - ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

বগুড়ায় বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার

  • আপডেট: Tuesday, February 4, 2025 - 9:15 pm

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার সোনাতলা থেকে বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার করেছে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চের (তীর) সদস্যরা।

মঙ্গলবার দুপুরে সোনাতলা উপজেলার সুজাইতপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার কিশোর রনির বাড়ি থেকে এটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তীরের সভাপতি হোসেন রহমান সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা ও সোনাতলা উপজেলা ফরেস্ট বিভাগের কর্মচারী জুলফিকার আলী। উদ্ধার করা গন্ধগোকুলটি পরে বিকেলে তীরের সদস্যরা বগুড়ায় সামাজিক বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে।

তীরের সভাপতি হোসেন রহমান জানান, গন্ধগোকুলটি জঙ্গল থেকে খাবারের সন্ধানের লোকালয়ে এসে সোনাতলার সুজাইতপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার কিশোর রনিদের বাড়ি গেলে সে এটিকে আটকে রাখে। পরে তীরের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পেরে মঙ্গলবার সেটি উদ্ধার করে। তিনি জানান, বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে প্রজাতিটি সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। নিশাচর এ প্রাণীটি একসময় প্রচুর পাওয়া গেলেও বর্তমানে তেমন চোখে পড়ে না।

তীরের সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা বলেন, গন্ধগোকুল নিশাচর খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে অন্যতম। এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনে কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম-বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়। অন্য খাদ্যের অভাবে মুরগি-কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ (তীর) উত্তরবঙ্গে পরিবেশ জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ২০১১ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য সংগঠনটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে জাতীয় পদকে ভূষিত হয়।

এদিকে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, গন্ধগোকুল (Large Indian Civet) নিশাচর প্রাণী। এটি লোকালয়ের কাছাকাছি ঝোপ-জঙ্গলে বাস করে। এরা তাল-খেজুর রস, ফল, সবজি ছাড়াও কৃষির জন্য ক্ষতিকর পোকামাড়র ও ইঁদুর খেয়ে কৃষকের উপকার করে। মজার বিষয় হলো, বট বা অন্যান্য গাছের ফল খাওয়ার পর এদের মলের সঙ্গে নির্গত বীজগুলোর শতভাগ অঙ্কুরোগদমে হয়, যা উদ্ভিদকূল রক্ষায় দারুণ কার্যকরী। জোহরা মিলা বলেন, আপনি বনজঙ্গল বা ঝোপ-ঝাড়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যদি পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ পান তবে বুঝে নেবেন আপনার আশেপাশেই গন্ধগোকুল আছে।

তিনি বলেন, বনজঙ্গল ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, পিটিয়ে হত্যা ইত্যাদি কারণে প্রকৃতির উপকারী এই প্রাণীটি অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন লোকজ ওষুধ ও টোটকা তৈরিতে গন্ধগোকুল হত্যা করা হয়। কিন্তু এসব ওষুধের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বরং কিছু অসাধু ব্যক্তি দেশের সরল মানুষকে ঠকাচ্ছে। এক সময় দেশে প্রচুর গন্ধগোকুলের দেখা মিললেও বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) বিবেচনায় এটি পৃথিবীর বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রাণীটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা কোনো ক্ষতি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।