ঢাকা | মে ১৪, ২০২৫ - ৩:০০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

অবশেষে রাজশাহীর সেই দুই ব্লগারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

  • আপডেট: Tuesday, February 4, 2025 - 9:19 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বক ও পাতি সরালি হাতে নিয়ে বাসায় মাংস রান্না করা হবে বলে ভিডিও প্রচার করা দুই ফেসবুক ব্লগারের বিরুদ্ধে রাজশাহীর আদালতে মামলা হয়েছে।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজশাহীর মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত-২ এ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বনবিভাগ।

এই ভিডিও প্রচারের কারণে পরিবেশের ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় বলা হয়েছে। পাঁচটি বক হাতে নিয়ে ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট দেয়া যুবকের নাম আল আমিন সোহাগ।

তার গ্রামের বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলায়। বাবার নাম আলিমুদ্দিন প্রামানিক। বর্তমান ঠিকানা রাজশাহী নগরীর হোসেনীগঞ্জ। আর পাতি সরালি হাতে নিয়ে ভিডিও পোস্ট দেয়া তরুণীর নাম তুলি। তার স্বামীর নাম শান্ত। তাদের বর্তমান ঠিকানা রাজশাহী নগরীর উপশহর কড়ইতলা। সম্প্রতি তারা ফ্ল্যাটে উঠেছেন। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায়।

সম্প্রতি দুজনের আলাদা আলাদা আইডি থেকে ভিডিও পোস্ট দেয়া হয়। হাতে পাঁচটি কানিবক নিয়ে আল-আমিনকে রোস্টের আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায়। আর তুলির ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি কুটি থেকে বুনোহাঁস বের করে মাংস রান্না করার ঘোষণা দিয়ে বলছেন, ‘আজ হাঁসপাখির মাংস হবে।’ এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এরপর রাজশাহী বনবিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু তারা তাদের পুরো ঠিকানার জোগাড় করতে পারছিলেন না কর্মকর্তারা। অবশেষে গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মামলা হলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। আগামী ২৪ মার্চ ওই মামলার ধার্য তারিখ।

মামলা নম্বর ১৫৮/২৫। তুলি ও আল-আমিন দুজনই তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের নানা ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করেন। ফেসবুকে তুলির অনুসারী সাড়ে ছয় লাখের বেশি। আর আল-আমিনের সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। কয়েক দিন আগে তাঁরা ফেসবুকে পাতি সরালি ও কানিবকের ওই ভিডিও প্রচার করেন।

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘কিছুদিন পূর্বে দুইজন ব্লগার পাখি ধরার ভিডিও করেন। ঘটনাটি গত ১৩ জানুয়ারি গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের নিকট থেকে ভিডিওটি সংগ্রহ করি এবং ভিডিওটি যাচাই করি।

সেখানে আল-আমিন সোহাগ তার ৩৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে বলেন, ‘আমার বাসায় স্পেশাল মানুষজন আসবে, তাদের জন্য পাখি নিয়ে আসা হইছে, এগুলো হলো বক পাখি। সুন্দর সুন্দর দেখতে একদম সাদা সাদা বাট মাংস কম।

ব্লগার তার আম্মাকে জিজ্ঞেস করেন, আম্মা এগুলো কাকে খাওয়াবে, তার আম্মা বলেন, এগুলো জামাইকে খাওয়াব। এগুলো কি আস্ত রোস্ট করে খাওয়াবেন, নাকি কেটে কেটে খাওয়াবেন, জবাবে তার আম্মা বলেন, রোস্ট করে খাওয়াব।’

তারপর সোহাগ বলেন, আজকে আমার বাসায় বকের রোষ্ট হবে গায়েস, তোমরাও চলে আসো বকের রোষ্ট খেতে। ভিডিওতে প্রদর্শিত পাখিগুলো দেশি কানিবক যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর তফসিল-১ এর ৩০১ নম্বর তালিকাভুক্ত সংরক্ষিত প্রজাতি।’

মামলায় বলা হয়, তুলি তার ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে বলেন ‘আমার বাপে বিলেত থেকে কী ধরে আনছে, অপর একজন তুলিকে জিজ্ঞেস করেন কী ওটা, তুলি বলেন, হাঁস পাখি, জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বলেন, এটা হচ্ছে হাঁস পাখি আমার শ্বশুর আব্বা মেরে আনছে, আর কী হবে দুপুরে রান্না আজকে, তুলি বলেন, আমার বেটি নিয়ে আসছে বাপেক খাওয়ানোর জন্য আর আমার বাপে আবার আমার জন্য রাতেত যাইয়া ধরে আনছে।

অপর ব্যক্তি বলেন, তুলির বড় বোনের একমাত্র মেয়ে, এটা হচ্ছে আজকে আমাদের দুপুরে খাবারে হবে পাতি হাঁস এবং হাঁস পাখি। তারপর তুলি বলেন, আসলে আমি যখন আসি, তখন আমার বাপ কী খাওয়াবে, আসলে আমি যেটা পছন্দ করি, সেটাই আমার বাপ নিয়ে আসার চেষ্টা করে।’ ভিডিওতে প্রদর্শিত পাখিটি পাতি সরালি। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’এর তফসিল- ১ এর ১৩ নম্বর তালিকাভুক্ত সংরক্ষিত প্রজাতি।

বর্তমান সময়ে এই ধরণের ভিডিও প্রায় সকল প্রকারের মানুষই দেখে। বন্যপ্রাণী ধরার কারণে সাধারণ মানুষ পাখি ধরা, খাঁচায় পোষা, ক্রয় করা ও পাখির মাংস ভক্ষণের জন্য উৎসাহিত হবে। ফলশ্রুতিতে এ জাতীয় পাখি প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও পাখি প্রদর্শনের মাধ্যমে ব্লগাররা সমগ্র দেশের জনগণকে এরকম অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করছেন।

সংরক্ষিত প্রজাতি দেশি কানিবক ও পাতি সরালি ধরা, ক্রয়-বিক্রয় করা, পরিবহন করা ও হত্যা করা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্লগারগণ প্রচলিত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুসারে অপরাধ করেছেন এবং অন্যদের সংশ্লিষ্ট অপরাধ করতে উৎসাহিত করেছেন।

‘পাখি ধরা, ক্রয় করা ও অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ৬ (১), ৩৪ (খ), ৪১ ও ৩৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ ও বিচার্য। ন্যায় বিচারের স্বার্থে ব্লগারগণের বিরুদ্ধে আদালতে পি.ও.আর. মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের জন্য মামলা দায়েরে বিলম্ব হয়েছে বলেও আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার আরজির সঙ্গে সসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মন্তব্যের তিন পাতার স্ক্রিনশর্ট জামা দেয়া হয়েছে।

এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও দেখে ভøগার আল আমিন আর তুলির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পরিযায়ী অতিথি পাখি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্মারকলিপি দেয় রাজশাহীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস। তাদের স্মারকলিপির কপিও আরজির সঙ্গে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS