ঢাকা | জানুয়ারী ২৭, ২০২৫ - ৮:০১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

‘মাকে খুশি করতে’ রাবিতে ভুয়া শিক্ষার্থী, অবশেষে কারাগারে

  • আপডেট: Sunday, January 26, 2025 - 8:55 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচয় গোপন করে চারমাস আইন বিভাগে ক্লাসসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার পর এক ভুয়া শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

গত শনিবার আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তারা বিভাগের সভাপতিকে জানান বিষয়টি।

পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের মাধ্যমে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ তাকে আদালতে চালান দেয়ার পর আদালত থেকে তাকে কারাগারে প্রেরণ করে।

ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর নাম নাভিক রহমান। তিনি ছদ্মবেশে আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে ক্লাস করছিলেন এতোদিন। পাশাপাশি, খেলাধুলা ও জাতীয় দিবস উদযাপনসহ বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।

প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভুয়া ওই শিক্ষার্থীর মায়ের অনেক আশা ছিল ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছেন এতোদিন।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, নাভিক আইন বিভাগের ৪১ ব্যাচের শিক্ষার্থী পরিচয় ব্যবহার করেন। পরে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তখন ভুয়া পরিচয় বের হয়। সে গার্ডিয়ান হিসেবে যাদেরকে ডেকেছিল, তারাও ভুয়া পরিচয় দিয়েছে।

এরপর বিভাগের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে তাঁকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রক্টর অফিস থেকে নাভিক ও তাঁর ভুয়া অভিভাবকদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। গত চার মাসে বিভাগের সব ধরনের প্রোগ্রামে তার উপস্থিতি ছিল বলে জানা যায়।

নাভিক রহমানের ফেসবুকে একাউন্ট ঘেঁটে দেখা যায়, বায়োতে নিজেকে রাবি আইন বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। প্রোফাইল পিকচারে আইন বিভাগ লেখা একটা টি-শার্ট পরিহিত ছবি রয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টে আইন বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার ছবিও পোস্ট করেছেন তিনি। তার ফ্রেন্ডলিস্টেও আইন বিভাগের অনেকে যুক্ত রয়েছেন।

আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের ২০২৩-২৪ সেশনের শ্রেণি প্রতিনিধি (সিআর) মাহমুদুল হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার প্রথম দিকে ১ মাস মত রোল কল করা হতো না।

ওই সময় নাভিককে নিয়মিত ক্লাস করতে দেখেছি। পরে রোল কল শুরু হলে তাঁকে খুব একটা নিয়মিত দেখা যেতো না। তবে বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে অংশগ্রহণ করতো নিয়মিত। আমাদের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষায় তাকে উপস্থিত হতে না দেখে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি যে, তার নাম আমাদের শিক্ষার্থীদের তালিকায় নেই।

সার্বিক বিষয়ে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জু বলেন, গতকাল রাতে আইন বিভাগের ভুয়া পরিচয় দেয়ায় ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবকদের আটক করা হয়েছে। আটকের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না, তবে আজ প্রক্টর স্যারের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে জেনেছি সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রই না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ছেলেটি স্বীকার করেছে যে, তার মায়ের অনেক আশা ছিল, তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পায়নি। তাই, মাকে খুশি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিনয় করেছে এতোদিন। তাকে থানায় হস্তান্তর করেছি। পুলিশ অধিকতর তদন্ত করে দেখবে বিষয়টি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক মুঠোফোনে বলেন, আইন বিভাগের ভুয়া পরিচয় দেয়ায় এবং তার আচরণ সন্দেহ হওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাঁকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।’