রাণীনগরে এক বছরে ১৯ জনের আত্মহত্যা
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: গত এক বছরে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় ১৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। এ তালিকায় ১১ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৭২ বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন। তালিকায় সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ৪০ বছরের ঊর্ধ্বরা। এই এক বছরে উপজেলাতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আত্মহত্যা করেছেন।
এর মধ্যে কেউ মানসিক সমস্যার কারণে আবার কেউ হতাশাগ্রস্ত হয়ে, কেউ পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন। সচেতন মহল বলছেন, আত্মহত্যা রোধে সচেতনতায় প্রচার না থাকা এবং পারিবারিক উদাসীনতার জন্য উপজেলায় দিন দিন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।
রাণীনগর থানা পুলিশের তথ্যমতে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি উপজেলার পারইল গ্রামের নাজমুল হক নাহিদ (২৩) গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর দুদিন পর আতাইকুলা গ্রামের নয়ন চন্দ্র পাল (৫৫) গলায় ফাঁস নেন। ছয় দিন বাদে ১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলার চরকানাই গ্রামের আব্দুস সাত্তার (৫৫) ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করন।
আত্মহত্যায় দায়েরকৃত অপমৃত্যু মামলার তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ মে মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ বাহার সরদার (৭২) মানসিক সমস্যাজনিত কারণে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। একই সমস্যায় গত ১২ জুন রঞ্জনিয়া গ্রামের রমজান আলী (৭২) ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর ১০ দিন পর মানসিক সমস্যায় বিজয়কান্দি গ্রামের কিশোর বাপ্পি সরদার (১৭) ফাঁস নেন। মানসিক সমস্যায় আত্মহত্যা করেন শাহারা বেগমও (৪১)। বিষপানে আত্মহত্যা করেন এই নারী।
পুলিশের তথ্যমতে, গত ২৫ জুন রায়পুর গ্রামের নরেশ চন্দ্রের কিশোরী মেয়ে চৈতি বালা (১৩) নিজ ঘরে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক কলহের জেরে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন একডালা গ্রামের ছামছুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা বিবি (৫৫)। ১৫ আগস্ট অজ্ঞাত কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন নান্দাইবাড়ি গ্রামের রহিদুলের স্ত্রী পেয়ারা বিবি (৩৫)।
এছাড়া মানসিক সমস্যায় কচুয়া গ্রামের মজনুর স্ত্রী রাশিদা বিবি (৫২) গলায় ফাঁস নিয়ে, বোদলা গ্রামের বাবুর স্ত্রী শিউলি বানু (৪৮) বিষপান করেন, পারইল গ্রামের ছলিম উদ্দীন (৪৬) বিষপান করেন, একই গ্রামের উজ্জল কুমারের স্ত্রী দিপ্তী রাণী (৪৫) গলায় ফাঁস নিয়ে, রাতোয়াল গ্রামের গফুরের মেয়ে ফাতেমা খাতুন (১৬) বিষপান করে, দামুয়া গ্রামের সহকারী প্রকৌশলী ওমর বক্স সরদার (৫৭) গলায় ফাঁস নিয়ে, কালীগ্রামের আনিছার রহমানের ছেলে নাফিজ (২১) বিষপান করে এবং এনায়েতপুর মঙ্গলপাড়া গ্রামের মাজেদুলের ছেলে আব্দুল্লাহ (১১) গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
উপজেলার এনায়েতপুর মঙ্গলপাড়া গ্রামের আব্দুল্লাহর বাবা মাজেদুল ইসলাম জানান, তিনি পেশায় একজন অটোভ্যানচালক। তার ছেলে একটি বাইসাইকেল নেয়ার জেদ ধরেছিল; কিন্তু সময়মতো কিনে দিতে না পারায় অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া আব্দুল্লাহ। কচুয়া গ্রামের রশিদা বিবির ছেলে রুবেল হোসেন জানান, তার মা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। নানান রোগের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়া নিয়ে রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুল ইসলাম বলেন, মাদক, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন সভা-সেমিনার করে সচেতন করা হচ্ছে। ঠিক একইরকমভাবে আত্মহত্যায় নিরুৎসাহিত করতে সভা-সেমিনার করা দরকার। পারিবারিকভাবেও সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবেই আত্মহত্যার হার কমে আসবে।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাইমেনা শারমীন বলেন, এই উপজেলায় আত্মহত্যা রোধে কোনো এনজিও, প্রতিষ্ঠান কাজ করে এমনটি এখনো আমার নজরে আসেনি। আত্মহত্যা রোধে বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান এবং মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।