সেচ সংকোচন সিদ্ধান্তে বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্ধেক জমিতে বোরোর আবাদ হবে না
সোনালী ডেস্ক: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আসন্ন বোরো মৌসুমজুড়ে একটা গভীর নলকূপ ৯৮০ ঘণ্টার বেশি চালাবে না। আর একটা গভীর নলকূপ বছরে ১ হাজার ৯৬০ ঘণ্টা চলবে।
সেচ সংকোচনের এমন সিদ্ধান্তে বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্ধেক জমিতেই এবার হবে না বোরোর আবাদ। ফলে পানি সঙ্কটে বরেন্দ্র ভূমির তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার বোরো চাষ অর্ধেকে নেমে আসবে।
একটা গভীর নলকূপ এলাকার সেচ স্কিমের অর্ধেক জমিতে এবার বোরো চাষ করা যাবে। বাকি অর্ধেক জমিতে চাষ বোরো ছাড়া সেচ সুবিধাবিহীন প্রচলিত অন্য ফসল করতে হবে। ভুক্তভোগী কৃষক ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার যে জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে, আগামী বছর ওই জমিতে কম সেচনির্ভর অন্য ফসল চাষ করতে হবে। এই নীতিমালা শুধু বোরো চাষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। গত অক্টোবরে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ নতুন সেচ নীতিমালার এই সিদ্ধান্ত নিলেও ডিসেম্বরে প্রথমে প্রচারপত্র হাতে পেয়ে কৃষকরা জানতে পেরেছে। গত ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন সেচ নীতিমালার বিষয়ে অবহিত ও সচেতন করতে বিএমডিএর পক্ষ থেকে মাঠে মাঠে লিফলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ শুরু করা হয়। মাঠে মাঠে এখন বিএমডিএর মাঠ কর্মকর্তারা সেচ কর্তন জমি চিহ্নিত ও শনাক্তের কাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষকদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। নতুন সেচ নীতিমালা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত থাকবে। ওই সময়ের বাইরে বোরোর নির্ধারিত জমিতেও আর সেচ দেয়া হবে না। সেচ সংকোচনে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কৃষকদের মতামত নেয়া হয়নি। অথচ আর কদিন পরই কৃষকরা বোরোর জমি তৈরির কাজ শুরু করবে। সূত্র জানায়, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এখন অধিভুক্ত এলাকা পুরো উত্তরাঞ্চলের ১৩৫টি উপজেলা।
উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বিএমডিএর গভীর নলকূপের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬৫টি। এর মধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, নওগাঁর নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশায় আছে ১ হাজার ৯৮০টি গভীর নলকূপ। আর বিএমডিএর অধিভুক্ত এলাকায় ব্যক্তি মালিকানার প্রায় ৫৬ হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করছে। কৃষকদের মতে, ব্যক্তি মালিকানার গভীর নলকূপগুলো কমিয়ে আনলেই পানি স্তরের সঙ্কট থাকবে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা না করে সেচ ঘণ্টা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অথছ ব্যক্তি মালিকানার অধিকাংশ গভীর নলকূপ অবৈধ। বিএমডিএর নতুন সেচ নীতিমালার কারণে এবার অর্ধেক জমিতে বোরো আবাদ করতে পারবে কৃষকরা। যেসব কৃষক বিএমডিএর সেচ স্কিমের বাইরে বোরো আবাদ করবে তারা সেচ সুবিধা পাবে না। সূত্র আরো জানায়, সেচের নতুন নিয়মের কারণে এবার কৃষকদের বিপুল পরিমাণ জমি পতিত থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
আর সেচ ঘণ্টা কমিয়ে আনায় প্রভাবশালীরা সুবিধা নিয়ে বোরো আবাদ করতে পারলেও যাদের জমি কম, তারা ওই সুবিধা পাবে না। ফলে বোরো মৌসুমে উৎপাদন ও চাষাবাদ দুই কমবে। এদিকে এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা জানান, বিষয়টি শুনেছি। বিএমডিএকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বলা হয়েছে। নতুন সেচ নীতিমালার কারণে হাজার হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা রয়েছে।