শিবগঞ্জে প্রচণ্ড শীত: কাঁপছে নদী ভাঙন-আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা
শিবগঞ্জ (চাঁপাই) প্রতিনিধি: মাঘের শীতে কাঁপছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নদী ভাঙন ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের শ্রমিক, দিনমজুর, কৃষক, দুস্থ ও অসহায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। তাদের গায়ে গরম পোশাক না থাকায় শ্রমিক হিসেবে কামলা খাটতে যেতে পারছে না। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে আয়-উপার্জন। করছেন মানবেতর জীবনযাপন।
জানা গেছে- অতিরিক্ত কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহে অসহায় ও গরীর পরিবারগুলোর শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের রোগে।
শুক্রবার বিকালে উপজেলার নদী ভাঙন কবলিত পাঁকা, উজিরপুর, দূর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছেÑ অসহায় মানুষগুলো পরিবার নিয়ে বাড়ির উঠানে খড়কুটো কুড়িয়ে আগুন জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। কেউ আবার ঘরে যা আছে তা গায়ে দিয়ে শীত দূর করার চেষ্টা করলেও শীত দূর না হওয়ায় থরথর করে কাপছে।
নদী ভাঙন কবলিত পাঁকা ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের রেজিয়া বেগম জানান, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বার বার বাড়ি স্থানান্তর করে একেবারে নিস্ব হয়ে গেছি। সংসার চালানো দায়ভার হয়ে গেছে। কোনদিন খেতে পাই, কোনদিন পাই না। এমতাবস্থায় শীতের গরম কাপড়া কেনার মত টাকা নেই। তাই এক রকম খালি গায়ে থাকছি। এ পর্যন্ত কোন শীতবস্ত্র পাইনি। আমাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসেনি। একই কথা বললেন একই গ্রামের মন্টু, দশরশিয়া গ্রামের আব্দুল মাতিন, দূর্লভপুর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের গোলাম মোস্তাফাসহ শতাধিক মানুষ।
সবচেয়ে দূর্বিসহ জীবনযাপন করছে উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া, দূর্লভপুর, মনাকষা, শাহাবাজপুরের গৌড়, শিবগঞ্জের তর্তীপুর, নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের রানীহাট্টি ও দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবার। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগী মতি তিলকা রানী জানান, আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নদীর তীরে হওয়ায় হিমেল হাওয়া ও প্রচন্ড শীতে কোন শীতবস্ত্র ছাড়াই অসহায় জীবনযাপন করছি।
এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোন শীতবস্ত্র দেয়নি। এমনকি কেউ খোঁজখবরও নেয়নি। একই সুরে কথা বললেন, শ্রী মতিরানী, শ্রী বিপদ কুমার, নুরেসা বেগম, মাসুদ রানাসহ আশ্রয়ন প্রকল্পের প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ। তাদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি দিয়ে শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, শাহাবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামুল হক রানা, মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুর রাকিব ও বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, এ বছর সামান্য কিছু শীতবস্ত্র দিয়ে বিপুল সংখ্যক অসহায় মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়নি। বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে এলাকার অনেক সহায় মানুষকে রাত জেগে ফসল পাহাড়া দিতে হচ্ছে। তাদের দেখে মায়া লাগে, কিন্তু করার কিছু নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যাতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো প্রায় ৩০ হাজার মানুষ শীতে কাঁপছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। বরাদ্দ পেলে অসহায় ও দু:স্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।