ঢাকা | জানুয়ারী ২০, ২০২৫ - ৫:১৮ পূর্বাহ্ন

বদলগাছীতে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ

  • আপডেট: Sunday, January 19, 2025 - 7:19 pm

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: সরকারি রাস্তার গাছ জিম্মায় নিয়ে সেই গাছ গোপনে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁর জেলার বদলগাছী উপজেলার ৭ নং আধাইপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান একেএম রেজাউল কবির পল্টন ও মেম্বার আমিনুল হক উজ্জলের বিরুদ্ধে।

আধাইপুর ইউপির বেগুনজোয়ার গ্রামের পাকা রাস্তার ধারে ৩টি ইউক্যালিপটারে গাছের ১৫টি টুকরো ও ৫ মন খড়ি জিম্মায় নেন। সেই গাছগুলো সরকারি কোষাগারে জমা না করে তা বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত করেছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা জায়, গত বছরের ৪ আগস্ট বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের সেনপাড়া-বেগুনজোয়ার পাঁকা সড়কের বেগুনজোয়ার গ্রামের রাস্তা থেকে গাছগুলো কাটা হয়।

ঐ রাস্তার পাশে বসবাসকারী নুফিয়া গাছ গুলো কেটে বিক্রি করার সময় এলাকার লোকজন স্থানীয় মেম্বার ও বন বিভাগকে জানান গাছগুলো চেয়ারম্যান সাথে কথা বলে মেম্বারের জিম্মায় রাখেন বদলগাছী উপজেলার বন বিভাগের মালী নূর মোহাম্মদ।

স্থানীয়রা জানান, বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের কাষ্টডোব-বেগুনজোয়ার পাঁকা রাস্তার পাশে থেকে বছর খানেক আগে অবৈধ্যভাবে ৩টি গাছ কাটার সময় এলাকার কিছু লোকজন বাঁধা দেয়। গাছ কাটার কথা জানার পরে অত্র এলাকার স্থানীয় মেম্বার আমিনুল ইসলাম উজ্জল ঘটনাস্থলে আসে।

পরে আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুইজন গ্রাম পুলিশ কমল ও কুদ্দুস ও বন বিভাগের প্রতিনিধি হিসাবে নূর মোহাম্মদ সেখানে এসে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে উজ্জল মেম্বারের জিম্মায় গাছ ও খড়িগুলো বুঝিয়ে দেই। এর পরে কি হয়েছে আমরা জানিনা। তারা আরও জানান, গাছগুলোর আনুমানিক বাজার মূল্য হবে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার।

উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ আগস্ট বেগুনজোয়ারের পাঁকা রাস্তার পাশে থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অফিসের মালি নূর মোহাম্মদ সেখানে যান। গিয়ে ৩টি ইউক্যালিপটাস গাছের ১৫টি কাঠের টুকরো ও ৫ মন খড়ি স্থানীয় মোমিনুল, আতিকুর, রায়হান, মজনু রহমান ও ঐ ওয়ার্ডের উজ্জল সামনে আধাইপুর ইউপির চেয়ারম্যান একে এম রেজাউল কবির পল্টনের সাথে কথা বললে চেয়ারম্যান স্থানীয় মেম্বার আমিনুল হক উজ্জলের নিকট গাছগুলো জিম্মায় দিতে বলে।

বন বিভাগের মালী নূর মোহাম্মদ উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে আমিনুল হক উজ্জল মেম্বারের জিম্মায় গাছ ও খড়িগুলো বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসেন।

গাছ কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে নুফিয়া বলেন, ‘বাধের নিচে আমার বাপের জমি। আমি সেখানে ইউক্লেটার গাছ লাগিয়েছি। এর মধ্যে আমার ব্যাটা মারা গেলো। আমি তখন ওখান থেকে বৈকন্ঠপুর রিফুজি পাড়ায় চলে আনু। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে টাকা পয়সার দরকার পড়ে। তখন আমি ইউএনও অফিসে যাই। ওখানে তখন উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুলের সাথে কথা কনু যে গাছগুলা কাটমু। শামসুল আমাক ইউএনওর কাছেও লিয়ে গেছোলো কিন্তু কোন কাগজ দায়নি।

জগন্নাথপুরের দেলোয়ারক দিয়ে গাছগুলা কাটনু। মন্টুর ব্যাটা খরি ব্যাচে ওই আবার মেম্বাররে ডাক দিলো। ওখানে কদ্দুস ও কমল গ্রামপুলিশ আসলো। পরে মেম্বার আসে । আসে খড়ি ও কাটের চুকুরা গুলা ভ্যান শুদ্ধা নিয়ে গেছে, অর্ধেক আছলো ওলাও লিয়ে যায়ে বিক্রি করছে। ওখান থেকে নিয়ে যায়ে বিক্রি করে আমাক কডা টাকা দিছিলো। পল্টনের কাছে তিন বার গেছি স্বীকার করেনি, মাহতাবের কাছে গেছি স্বীকার করেনি। উজ্জল মেম্বার গাছ গুলা বিক্রি করে টাকা ভাগ করে খাছে এর বেশি হামি কওয়া পারমো না।

আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আহসান উল মাহমুদ জানান, এ ব্যাপারে আমি জানিনা। যদি গাছ ইউনিয়ন পরিষদে আনতো তাহলে আমরা রেজুলেশন করতাম। বদলগাছী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মইনউদ্দীন কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বেগুনজোয়ার বাঁধের রাস্তায় বন বিভাগ কোন গাছ লাগাইনি। তাই সব গাছের দ্বায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদ এবং ভূমি অফিসের।

আধাইপুর ইউনিয়নের মেম্বার আমিনুল হক উজ্জলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান জিম্মায় নিতে বলেছিল। এরপর ঐ গাছ চেয়ারম্যান আমাকে একজনকে দিতে বলেছে আমি দিয়ে দিয়েছি। কি করছে আমি জানি না। জানতে চাইলে আধাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম রেজাউল কবির পল্টন বলেন, ওই গাছগুলো এক মহিলা কাটছিল, মালগুলো মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়েছিল।

ঐ মহিলা আবার ইউএনওর কাছে গেছিল। ইউএনও আমাকে কাঠ ও খড়িগুলো দিয়ে দিতে বলে, আমি তখন দিয়ে দেই। গাছের কোন লিখিত আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, তা বলতে পারবো না। ইউএনও স্যার নির্দেশ দিয়েছে তাই দিয়ে দিয়েছি।

এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান সাথে বলেন, আমি নতুন এসেছি। আমি ব্যাপারটা দেখছি। গাছ বিক্রির ব্যাপারে নওগাঁ জেলার উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) টি.এম.এ মুমিন-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসছি। আপনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান বিষয়টি।