চাঁপাই সীমান্তে ফের উত্তেজনা হামলায় ৩ বাংলাদেশি আহত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে আবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
শনিবার দুপুরে উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা ও কিরণগঞ্জ বিজিবি সীমান্ত ফাঁড়ির মাঝামাঝি এলাকায় এ উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তে দুই দেশের নাগরিকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হামলায় তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করেছিল। তখন চৌকা সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছিল।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, শনিবার দুপুরে সীমান্তে শূন্য রেখার পাশে বাংলাদেশের ভেতরের জমিতে গম কাটতে গিয়েছিলেন তারা। তখন ভারতীয় নাগরিকেরা এসে বাংলাদেশের ভেতরের কয়েকটি আমগাছ কেটে দেন।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় ভারতীয় নাগরিকদের হাঁসুয়ার আঘাতে ও তাদের ছোঁড়া পাথরে কয়েকজন বাংলাদেশি আহত হন।
স্থানীয় বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাদশা বলেন, সীমান্তে গম কাটা নিয়ে উত্তেজনা শুরু হয়। ভারতীয় লোকজন বাংলাদেশ অংশে ঢুকে পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এতে তিন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। ভারতীয়দের হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন বিনোদপুর ইউনিয়নের কালীগঞ্জ নামোটোলা এলাকার যুবক মেসবাহুল হক।
তিনি বলেন, তিনিসহ মোট তিনজন আহত হয়েছেন। অন্য দুজনের মধ্যে বিশ্বনাথপুর গ্রামের রনি ভারতীয়দের ছোড়া পাথরের আঘাতে ও ফারুক হাঁসুয়ার আঘাতে আহত হয়েছেন।
বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সীমান্তে অবস্থান করছেন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে কথা বলতে সাংবাদিক তার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। পরে বিকালে এক ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, চৌকা ও কিরণগঞ্জ ক্যাম্পের মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে কিছু আমগাছ ছিল।
ওই আমগাছ কাটা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন শূন্য রেখা বরাবর দুই দেশের নাগরিকেরা দাঁড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির জনবল বাড়ানো হয় এবং তারা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরে বিকাল চারটা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক হয়। যেখানে এ ঘটনার জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি গাছ কাটার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে।
বিজিবি কমান্ডার বলেন, এ ঘটনার সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে আছেন। কেউ যাতে শূন্য রেখা অতিক্রম না করে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে বিজিবি প্রস্তুত আছে। বিজিবির পাশে দেশপ্রেমিক জনগণও আছেন। আহতের ব্যাপারে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের কাছে আহতের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিসংখ্যান নেই।
বিএসএফের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তারা (বিএসএফ) উচ্ছৃঙ্খল লোকজন (মব) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ ব্যাপারে বিজিবি মহাপরিচালককে তারা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আশা করছেন, বিজিবি ও বিএসএফ সদর দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ে এ ব্যাপারে কথা হবে।