এত ক্ষমতার মালিক তো দেশ ছেড়ে পালালেন কেনো: জামায়াতের আমির
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এত ক্ষমতার মালিক তো দেশ ছেড়ে পালালেন কেনো। যে ক্ষমতার দাপটে আপনারা কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করতেন। আপনাদের পলায়ন, আপনাদের পরাজয়ই প্রমাণ করেছে সর্বময় ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সমস্ত ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। সার্বভৌমত্বের একমাত্র অধিকার, একমাত্র আল্লাহ তায়ালার। বিগত সরকার এই অপরাধে নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে। তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব মানে না। তারা মনে করেছিল নিজেই সার্বভৌম। সার্বভৌম মানে সর্বময় ক্ষমতার মালিক। এত ক্ষমতার মালিক তো দেশ ছেড়ে পালালেন কেন। সে ক্ষমতার দাপটে কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার চেষ্টা করতেন। আপনাদের পলায়ন, আপনাদের পরাজয়ই প্রমাণ করেছে সর্বময় ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
তিনি বলেন, ইজ্জত দেয়ার মালিক আল্লাহ, ইজ্জত কেড়ে নেয়ার মালিকও আল্লাহ। আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, তোমরা যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা কর। আর তোমরা মানুষের প্রতি সম্মান দেখাও এহসান করো। এটা আল্লাহর হুকুম যারা ন্যায়বিচারের প্রতি আছে, যারা মানুষকে সম্মান করবে যারা মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করবে। আল্লাহ তাদের ইজ্জত বাড়িয়ে দিবে। আর যারা সমাজে জুলুম এবং অবিচারের প্রচলন করবে মানুষকে বেইজ্জত করবে বিশেষ করে সম্মানিত মানুষদেরকে যারা অসম্মান করবে আল্লাহ তাদের সম্মান এবং রাজত্ব দুইটাই কেড়ে নেবে। আল্লাহ বলছে, ক্ষমতা আমি দেই ক্ষমতা আমি কেড়ে নেয়। ইজ্জত আমি দেই ইজ্জত আমি কেড়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর শক্তিতে বলিয়ান এমন একটি জাতি গঠন করতে চাই। যে জাতি আল্লাহর শক্তিতে আলোকিত হবে। সে জাতি হবে সাহসী ও বীরের জাতি। এ জাতি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করবে না। মোমিনরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করেন না। মাথা নত করেনি বলে একটানা সাড়ে পনেরো বছর আলেম-ওলামাদের ওপর বিগত সরকার তাণ্ডব চালিয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমিরসহ ১১ জন দায়িত্বশীল নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে তারা খুন করেছে। দেশের অসংখ্য ভাই বোনকে তারা খুন করেছে, গুম করেছে, পঙ্গু করেছে, আহত করেছে তারা। তাদের চাকরি কেড়ে নিয়েছে, ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে।
তিনি বলেন, দেখো সাড়ে ১৫টি বছর। যে জাতির ওপর একটি জগদ্দল পাথর, ফ্যাসিবাদের পাথর চেপে বসেছিল, মহান রাব্বুল আলামিন যারা গেল বছরের ৫ই আগস্ট তাদের জুলুমের কবল থেকে এ জাতিকে মুক্তি দান করেছে। অনেকে জিন্দা শহিদ হয়ে আছে। হাত পা টুকরো টুকর, দুটি নয়ন অন্ধকার। আমাদের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। বাকিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এতে আমরা ব্যতীত নয়। আমরা আল্লাহর দরবারে শোকর গুজার করি।
ডা. শফিকুর রহমান আরো বলেন, একমাত্র কোরআনের শাসন কায়েমের মাধ্যমে একটি মানবিক বাংলাদেশে গড়তে চাই। দুর্নীতি মুক্ত, চাঁদাবাজ, দখলদার মুক্ত ন্যায়ের বাংলাদেশ গড়তে চাই। আল্লাহর শক্তিতে বলিয়ান জাতি গঠন করতে চাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ইনসাফ এ জমিনে কায়েম না হবে। ইনসাফ কায়েমের গ্যারান্টি একমাত্র আল কোরআন দিতে পারে। আল কোরআনের শাসন সকল ধর্মের, সকল বর্ণের, সকল দলের মানুষের জন্য একমাত্র ইজ্জতের গ্যারান্টি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলার এই সুযোগ করে দিয়ে গেছে তাদের কাছে জাতি কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজিবন পরিষদ করতে হবে শ্রদ্ধার সাথে। জুলাই আন্দোলনে যত শহিদ হয়েছে আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, তাদের কাছে ঋণী। তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর। তাদের আমরা মাথায় তুলে রাখতে চাই।
এসময় তিনি আরও বলেন, শহিদ পরিবার ও আহতদের দেখভাল করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এটা তাদের প্রতি কোনো দয়া নয়। যারা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়ে গেছে তাদের কাছে পুরো জাতি কৃতজ্ঞ। এই ঋণের দায় আমাদের আজীবন শ্রদ্ধার সাথে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জামায়াত আমির বলেন, আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। যে কাক্সিক্ষত বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
সারাদেশে ফুটপাত, হাটবাজার, জলমহাল, বালুমহাল, টেম্পুস্ট্যান্ডসহ সব জায়গায় চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব চলছে। অফিস, আদালতে ঘুষ বাণিজ্য, মামলা বাণিজ্য চলমান। যারা এসব করছেন তাদের কাছে বিনয়ী অনুরোধ ছেড়ে দেন। আল্লাহর ওয়াস্তে এসব করবেন না। আমাদের শহিদদের প্রতি এগুলো অসম্মান, আমাদের পঙ্গুত্ববরণ করা, আহত ছেলেমেয়েদের জন্য এসব চরম কষ্টের।
জামায়াত আমির আরও বলেন, বিশ্বের কোথাও সমাজতন্ত্র, কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতা, কোথাও পুঁজিবাদ আবার কোথাও প্রচলিত আছে ফ্যাসিবাদ এসবই মানুষের গড়া। আসমান-জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব আল্লাহর হুকুম মানে। একটা ছাগলও অন্য ছাগলের নিয়মে চলে না কিন্তু আমরা মানুষ এতো নিকৃষ্ট যে মানুষের তৈরি করা নিয়ম মেনে চলি।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির ড. কেরামত আলী’র সভাপতিত্বে কর্মী সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোবারক হোসাইন, রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন, জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক প্রমুখ।
সম্মেলন পরিচালনা করেন মহানগরের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মন্ডল ও সহকারী সেক্রেটারি শাহাদত হোসেন, জেলা সেক্রেটারি গোলাম মুর্তৃজা ও সহকারী সেক্রেটারি নুরুজ্জামান লিটন।