রাজশাহীতে ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্তির অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশির) ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতি না মেনে টাকা নিয়ে এমপিওভুক্ত করে দেয়ার একটি চক্র গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এরই প্রেক্ষিতে এই ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ৮ জানুয়ারি মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-২) ফজলুল হক মনির স্বাক্ষরিত চিঠিতে রাজশাহী কলেজ প্রফেসর অধ্যক্ষ মু: যহুর আলীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ৫ মাউশি কর্মকর্তা হলেন- মাউশি রাজশাহী কার্যালয়ের কলেজ শাখার পরিচালক ড. বিশ্বজিৎ ব্যানার্জি, সহকারী পরিচালক আলমাছ উদ্দিন, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সেসিপ) প্রকল্পের গবেষণা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামানিক, সহকারী পরিদর্শক আসমত আলী ও রাশেদুল ইসলাম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এই ৫ কর্মকর্তা সহযোগে বিধি বহির্ভূতভাবে এমপিওভুক্তিসহ রাজশাহী অঞ্চলে সীমাহীন দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। বেসরকারি কলেজে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্ত ডিগ্রি স্তরের শিক্ষকদের তালিকায় নাম প্রেরণের ক্ষেত্রে এই চক্র শিক্ষকদের নাম প্রেরণের বিপরীতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ব্যানবেইসে এই নাম নেই এমন তথ্যবিহীন শিক্ষকদেরও এমপিওভুক্তির অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত দেওয়ার জন্য রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু: যহুর আলীকে প্রধান করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক (কলেজ-১) শাখার সফিউল বশরকে এই কমিটির সদস্য করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে পত্র প্রাপ্তির ১০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ৯ অক্টোবর শিক্ষা সচিব বরাবর একটি অভিযোগ জমা পড়ে।
সেখানে বলা হয়, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মদতপুষ্ট হয়ে বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিশাল দুর্নীতির মিশন নিয়ে প্রফেসর ড. বিশ্বজিত ব্যানার্জী মাউশি রাজশাহী’র পরিচালক পদে বদলি হয়ে আসেন। তিনি অত্র কার্যালয়ে আসার পর এই অফিসের সহকারী পরিচালক (কলেজ) আলমাছ উদ্দিন, সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র প্রামানিক (গবেষণা কর্মকর্তা), আসমত আলী (সহকারী পরিদর্শক) এবং রাশেদুল ইসলাম (সহকারী পরিদর্শক) গংদের সমন্বয়ে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অমান্য করে বিধি বহির্ভূতভাবে সমন্বয় এমপিও দুর্নীতি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। উপরোক্ত কর্মকর্তাবৃন্দ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো রকম বিধি বা নিয়ম-নীতি না মেনেই টাকার বিনিময়ে এমপিওসহ নানাবিধ অনিয়ম কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
শিক্ষকরা তাদের এমপিওভুক্তি, উচ্চতর স্কেল, পদোন্নতিসহ সকল বিষয়ে অনলাইনে আবেদন করলেও পরিচালকের এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা ফোন দিয়ে অফিসে ডেকে এনে প্রতিটি কাজের জন্য টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ফাইল রিজেক্ট করে দেন। অথচ সরকার শিক্ষকদের এসব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অনলাইনে সেবা চালু করেছেন। কিন্তু এই সিন্ডিকেট এর বাইরে কোনো কাজ করে না। ফলে এই অঞ্চলের শিক্ষক-কর্মচারী তথা আপামর জনসাধারণ তাদের এই দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বিক্ষুব্ধ ও অতিষ্ঠ।
এ বিষয়ে মাউশি রাজশাহী কার্যালয়ের কলেজ শাখার পরিচালক প্রফেসর আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আমি নভেম্বরের ১৭ তারিখ যোগদান করেছি। এর আগে যারা এখানে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা আগামী ১৭ জানুয়ারি তদন্ত করতে আসবেন বলে জেনেছি। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, সেটি আমার জানা নেই। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের অনেককেই বদলি করা হয়েছে। এখনো এখানে একজন কর্মরত আছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মু: যহুর আলী সোনালী সংবাদকে বলেন, মাউশির এমপিও ও আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে একটি তদন্তের চিঠি হাতে পেয়েছি। তাদের ঐখানে এমপিওর বিনিময়ে টাকা আদায়ের একটি অভিযোগ আছে। আমরা এখনও কাজ শুরু করতে পারিনি। মূলত ঢাকা থেকে দুইজন রাজশাহী আসবেন। তারা সময় দিতে পারছেন না। তাই সদস্যদের সুবধিমত সময়ে আমরা কাজ শুরু করবো। তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।