ঢাকা | জানুয়ারী ১৩, ২০২৫ - ৪:০৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাবিতে পোড়ানো কোরআন শরীফ উদ্ধার: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, তদন্ত কমিটি গঠন

  • আপডেট: Sunday, January 12, 2025 - 9:00 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হল থেকে আগুনে পোড়ানো পবিত্র কোরআন শরীফ উদ্ধার করা হয়েছে।

রোববার ভোর থেকে দুপুর ১২টার মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী, শহিদ জিয়াউর রহমান, শেরে বাংলা ফজলুল হক ও মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা অর্ধ-পোড়ানো কোরআন উদ্ধার করেন। এছাড়া শহিদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদ থেকে কয়েকটি পাতা পোড়ানো অবস্থায় কোরআন উদ্ধার করে হল প্রশাসন। একই সঙ্গে শহিদ জিয়াউর রহমান হলের দেয়ালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোগো পদ্মফুলের ছবিও আঁকানো হয়েছে।

পরে বিকালে এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কোরআন পুড়িয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানির বিরুদ্ধে এবং ষড়যন্ত্রকারীর শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের এখনো শনাক্ত করতে পারেনি প্রশাসন।

এদিকে ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হল প্রশাসন ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, রোববার ফজরের নামাজের সময় পবিত্র কোরআন শরীফ পড়তে গেলে শিক্ষার্থীরা দেখতে পান কোরআন শরীফের প্রথম দিকের কিছু অংশ পোড়ানো। পরে সকাল ১০টার দিকে সৈয়দ আমীর আলী হলের মুক্তমঞ্চে অর্ধ পোড়ানো অবস্থায় পবিত্র কোরআন শরীফ দেখতে পান এক শিক্ষার্থী।

পরে বিষয়টি জানাজানি হলে হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বেলা ১১টার দিকে শহিদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদে খোঁজ নিয়ে পবিত্র কোরআনের কয়েকটি পাতা পোড়ানো দেখতে পায় হল প্রশাসন। অন্যদিকে দুপুর ১২টার দিকে মতিহার হলের ছাদে অর্ধ পোড়ানো এবং ছিন্নভিন্ন অবস্থায় গ্রন্থটি উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে আমীর আলী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হারুনর রশিদ বলেন, সকালে হল সুপার আমাকে ফোন করে বলে ছাত্ররা হলে কোরআন পোড়ানো অবস্থায় পেয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ হলে এসে দেখি বিষয়টি সত্য। মূলত ধর্মীয় ইস্যুতে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করবো। আমি এবিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি।

শহিদ হবিবুর রহমান হল প্রাধ্যক্ষ বাইতুল মোকাদ্দেছুর রহমান বলেন, ‘হলগুলোতে এমন ঘটনার খবর পেয়ে আমি আমার হল মসজিদের মুয়াজ্জিনকে খোঁজ নিতে বলি। খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান মসজিদে সংরক্ষিত একটি কোরআন শরীফের কয়েকটি পাতা পোড়ানো। পরে আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাই।’

ঘটনা জানার পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। পরে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে পূর্বপরিকল্পিত। সম্ভবত একই সময়ে একটি গোষ্ঠী রাতের আঁধারে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখানে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আমি আমার শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যারা ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের উদ্দেশ্য আমরা সফল হতে দিতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ গুলোকে সামনে রেখে পুলিশ, গোয়েন্দাসহ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে দোষীদের বের করতে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দোষীদের যত শক্ত শাস্তি দেওয়া যায় আমরা সেই ব্যবস্থা করব। দোষী যদি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ হয়ে থাকেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।’

পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ:

বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টরিয়াল টিম ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো সময় পরিচয়পত্র দেখতে চাইতে পারে বলে বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর।

তদন্ত কমিটি গঠন:

ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে উপাচার্য শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সাথে এক জরুরি সভায় ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ:

পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানোর প্রতিবাদ সমাবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য যারা চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা একত্রিত হয়েছি। কোরআন মাজিদ পৃথিবীর একমাত্র নির্ভূল পবিত্র গ্রন্থ।

কোরআন মাজিদে আঘাত করে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসর এবং আধিপত্য কায়েমকারীদের তাড়াতে চাই। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চায় তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিব।

শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতেখার আলম মাসউদ ও জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক আখতার হোসেন মজুমদার। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রায় ৪শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।