ঢাকা | মে ১, ২০২৫ - ১২:০৩ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু: চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত রামেক, তৈরি হচ্ছে আইসোলেশন ওয়ার্ড

  • আপডেট: Sunday, September 22, 2024 - 9:19 pm

সোনালী ডেস্ক: গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ৯২৬ জন নতুন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা একদিনে আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে চলতি বছরে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে চলতি বছর মশাবাহিত এ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩১ জনে।

এছাড়া এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৪ হাজার ৩৪ জন। অন্যদিকে রাজশাহী অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগিদের আরও উন্নত এবং সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্যই মূলত এ ওয়ার্ড তৈরি হচ্ছে।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯২৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকাতেই ৩১৬ জন রয়েছেন।

এছাড়া ঢাকা বিভাগে ১৯৬ জন, বরিশালে ৬৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫১ জন, খুলনায় ১০১ জন, ময়মনসিংহে ১৮ জন ও রাজশাহী বিভাগে ৪৬ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর একদিনে সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে ৮৮৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গতকালের আগ পর্যন্ত সেটিই ছিল একদিনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের রেকর্ড।

এদিকে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক গৃহবধূ। গত শনিবার রাতে রামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত নারীর নাম শাকিলা (২০)। তিনি রাজশাহীর বাগমারা এলাকার বাসিন্দা। রামেক হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ডেঙ্গু জ্বরসহ নানা উপসর্গ নিয়ে বাগমারা থেকে রাজশাহী মেডিকেলে আসেন।

এ সময় শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় চিকিৎসক ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। শনিবার রাতে মারা যান শাকিলা। ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, শাকিলা ভর্তি হওয়ার পর থেকে হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার উপসর্গগুলো জটিল হওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই চিকিৎসক আরও বলেন, প্রায় প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা আসছে হাসপাতালে। রোগীর চাপ বাড়লে প্রয়োজনে নতুন ওয়ার্ড খোলা হবে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৯ জন চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে।

অন্যদিকে রামেকে ডেঙ্গু চিকিৎসায় একটি বিশেষ ডেঙ্গু টিম গঠন ও রোগীদের জন্য নতুন একটি আইসোলেশান ওয়ার্ড খোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডা. শংকর কে বিশ্বাস। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আমরা সেই আইসোলেশন ওয়ার্ডটা রোগীদের জন্য খুলে দিব। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য যাবতীয় সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই।

রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, ডেঙ্গু রোগীদের সেবা প্রদানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। রোগীদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখা হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম সম্পর্কে তিনি আশ্বস্ত করে জানান, রামেকের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেলাইনসহ অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী মজুত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে কোনো সরঞ্জামের ঘাটতি যেন না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৪ হাজার ৩৪ জন। তাদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। ১ জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মারা যাওয়া ১৩১ জনের মধ্যে ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ নারী এবং ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ।

প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন।

ওই বছর আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিন লাখ ১৮ হাজার ৭৪৯ জন। গত বছর এক হাজার ৭০৫ জন মশাবাহিত এ রোগে মারা যান, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS