আউশধান খেতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, ধান রক্ষায় চাষির প্রাণান্তর লড়াই
মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: মাঠে মাঠে পেঁকেছে আউশ। আমনে চলছে পরিচর্যা। আগাম আউশ পাঁকায় খেতে হানা দিচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বাবুই পাখির দল। খেয়ে ও নষ্ঠ করে ফেলছে পাঁকা ধান। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাঠে মাঠে এমন চিত্র দেখা গেছে। চাষিরা বাবুই পাখি তাড়াতে নানান পন্থা অবলম্বন করছেন। কেউ কেউ তপ্ত রোদে ধানখেত পাহারাও দিচ্ছেন।
পাঁকা ধান রক্ষায় জমিতে প্রাণান্তর লড়াই করছেন পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আউশচাষি টুটুল মিয়া। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বাড়ি নিয়ে যাব কী। সব ধান খেয়ে নিচ্ছে বাবুই পাখির দল। তার জমির আউশ ধান তিন ভাগের একভাগ বাবুই পাখি খেয়ে ও নষ্ট করে ফেলেছে। টুটুল বলেন, দুমুঠো ভাত খেতে এতো লড়াই আর ভাল লাগে না।
আউশের শুরুতেই অনাবৃষ্টি। সেচ খরচ, বৃষ্টি কম হওয়া, পোকার আক্রমণ, ইঁদুরের হানা, সবশেষ আবার এখন পাখির আক্রমন। ধান ঘরে নিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। হাজারও বাবুই পাখির দল পাকা ধান খেতে পড়ছে। খাচ্ছে আর নষ্ট করছে। পাখিগুলো মারতে চাই না। তাই পলিথিন, বোতল, ক্যাসেটের ফিতা সাঁটিয়ে পাখির হাত থেকে ধান রক্ষায় তপ্তরোদ ও গরমে লড়াই করে যাচ্ছি।
আউশ চাষিরা জানান, উপজেলায় এবার কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। চাষিরা এবার সেচ দিয়েই আউশ রোপণ করেছেন। এসব জমির ধান এখন আধা পাকা, পাকতে শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। এদিকে জমিগুলোতে দিনভর ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই, বাবুইসহ নানা জাতের পাখি এসে বসছে, পাখির দল ধান কিছুটা খেয়ে যাচ্ছে, ধানগাছ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্তও করছে।
উপজেলার বিভিন্ন মাঠের ধানখেতে গিয়ে দেখা যায়, চাষি পাঁকা ধানখেত রক্ষায় নানা পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। কেউ কেউ জমির চারদিকে জাল দিয়ে ঘেরাও করেছেন, কেউ কেউ টিনের সাহায্যে উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে পাখি তাড়াচ্ছেন, কেউ পলিথিন সাঁটিয়ে দিচ্ছেন, অনেক আবার দিনভর জমিতে বসে পাহারা দিচ্ছেন।
নামোদুর খালী গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১ বিঘা জমিতে আউশ রোপণ করেছিলেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে তার পাঁকা ধান কাটবেন। ঠিক এ সময়ে জমিতে পাখি বসে খেয়ে ফেলছে ধান। খরচের টাকা উঠবে কি না শষ্কায় রয়েছেন তিনি। একই গ্রামের সারোয়ার হোসেন বলেন, বালাইনাশক, সার ও সেচের দাম বেড়েছে। বিগত বছরগুলোতে এ ধান বৃষ্টির পানিতে হতো। এবার সেচ দিয়ে করা হয়েছে। তাই খরচ বেড়েছে। শেষ সময়ে আবার পাখির অত্যাচারে ঘরে ধান তোলা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
শালঘরিয়া গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এখন পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে শষ্কায় পড়েছেন। ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই ও বাবুই পাখি জমিতে বসে ধান খেয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় ধান গাছ ভেঙে পড়ে মরে যাচ্ছে। ধান কাটার আগ পর্যন্ত এমন চলতে থাকলে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ ও ৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুন্তলা ঘোষ বলেন, এ সময় পাখিদের খাদ্য সঙ্কট থাকায় তারা পাঁকা আউশ ধানের জমিতে এসে বসছে। বিষ বা ফাঁদ দিয়ে পাখি হত্যা করা যাবে না। পাখির হাত থেকে রক্ষার জন্য কাকতাড়ুয়া বা নেট জাল দিয়ে জমি মুড়িয়ে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।