ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪ - ৯:৫৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

অভ্যুত্থান হয়েছে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনের জন্য

  • আপডেট: Tuesday, September 17, 2024 - 8:00 pm

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের অভিপ্রায় নেই বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টিকে নিতান্তই গুজব বলেও উড়িয়ে দেন তিনি।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে যে রিউমার বা কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে, অনেকেই তা শুনতে চাচ্ছে আমাদের থেকে। এটা আমরা এর আগেও স্পষ্টভাবে বলেছি যে, এখনই কোনো রাজনৈতিক দল খোলার কোনো অভিপ্রায় আমাদের নেই। ’

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন, তাদের কারোরই ক্ষমতার অভিলাষ নেই। সবারই পেশাগত জীবন আছে, কাজ শেষে সবাই সেখানে ফিরে যেতে চায়। দেশের মানুষ একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে দায়িত্বটা এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে, সেটি যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য। ’

সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, ‘যে সংস্কারের কথা আমরা বলছি সেটা ছিল এক দফারই অংশ। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে; কিন্তু এক দফার যে মূল অংশ, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ- সেই ব্যবস্থার বিলোপের জন্য যে সংস্কারগুলো অত্যাবশ্যকীয় সেগুলো করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং আর এটা জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতেই হয়েছে। জনগণ নির্বাচনের জন্য কিংবা ক্ষমতার পালা বদলের জন্য এই অভ্যুত্থানে আসেনি। যদি আসতো সেটা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেই আসতো বলে আমি মনে করি। এই অভ্যুত্থান হয়েছে স্পষ্টভাবেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধনের জন্য। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি যে ব্যবস্থাটা বিদ্যমান আছে এটা সংস্কার না করে দিয়ে যেতে পারি, আমরা মনে করি যে, সরকারই ক্ষমতায় আসুক, যেকোনো রাজনৈতিক সরকার এই অটোক্রেডিক একটা সিস্টেমের মধ্যে সে নিজেও অটোক্রেডিক হয়ে উঠতে বাধ্য হবে। সে কারণে আমরা মনে করি, এই সংস্কারটা অত্যাবশ্যকীয়। দেশের জনগণ যেভাবে দেশকে গড়তে চায়বে, দেশ পুনর্গঠনের যে প্রস্তাবনা দেশের মানুষের মধ্য থেকে উঠে আসবে সেটার বাস্তবায়ন করাটাই আমাদের দায়িত্ব হবে। ’

রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম আছেন, তিনি এবং উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, এই দুজনের নেতৃত্বে আমাদের একটি টিম করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রেগুলার বেসিসে বসছেন। অফিসিয়াল বসার বাইরেও আনঅফিসিয়ালি যোগাযোগ রাখছেন যাতে আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। দেশ পুনর্গঠনের এই যাত্রায় রাজনৈতিক দলসহ সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সেটা আমরা নিশ্চিত করব। ’

এর আগে রাজশাহী মহানগরীর তেরখাদিয়ায় ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

এতে সভাপতিত্ব করেন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক আবদুর রহিম খান। এছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরসহ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সফর করেন। ক্যাম্পাসে পৌঁছে তিনি প্রথমে উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত ও মতবিনিময় করেন।

এসময় তারা রাবির শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, পাঠ্যক্রম বহির্ভূত সৃজনশীল কর্মকাণ্ডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করেন। সেখানে অন্যদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর অবায়দুর রহমান প্রামানিক, অনুষদ অধিকর্তা, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, প্রক্টর, ছাত্র-উপদেষ্টা, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক, বিশিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

পরে উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে রাবি স্টেডিয়ামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বনাম রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ উদ্বোধন ও বক্তব্য রাখেন। রাবি উপাচার্য প্রফেসর সালেহ্ হাসান নকীবের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাবি কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর অবায়দুর রহমান প্রামানিক।

প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শুরুর আগে বৈশ্বম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম বহির্ভূত অন্যান্য সৃজনশীল কর্মকাণ্ডেও দক্ষ হতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সামাজিক মাধ্যমের চেয়ে খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় অধিকতর মনোনিবেশ করা আবশ্যক। সুস্থ জাতি গঠনে সুস্থ দেহ ও মনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অন্যান্য বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় কিছু সময় ব্যয় করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

উপাচার্য তার বক্তব্যে বলেন, এই প্রীতি ম্যাচের সময় উপদেষ্টার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে অংশগ্রহণকারী দুটি দলকে অনুপ্রাণিত করেছে। উপাচার্য অংশগ্রহণকারী দলগুলিকে অভিনন্দন জানিয়ে আগামীতে ক্রীড়াক্ষেত্রে এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেখানে উপাচার্য উপদেষ্টাকে রাবির পক্ষ থেকে স্মারক ক্রেস্ট উপহার দেন। প্রীতি ফুটবল ম্যাচে রাবি দল ২-০ গোলে জয়ী হয়।