ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ - ৩:৪২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

জনপ্রতিনিধিরা আত্মগোপনে: ভোগান্তিতে রাজশাহীর হাজারো মানুষ

  • আপডেট: Tuesday, August 13, 2024 - 9:39 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আত্মগোপনে চলে যান রাজশাহীর বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা। তারপর থেকে জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই এখনো কার্যালয়ে ফেরেননি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা।

গত ৫ আগস্ট থেকে বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহীর ৭২টি ইউনিয়ন, ১৪টি পৌরসভা ও ৯টি উপজেলা পরিষদের সেবা কার্যক্রম। রাজশাহীর স্থানীয় সরকার বিভাগের এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থী হাজারো মানুষ। গত ৫ আগস্ট থেকে রাজশাহীতে চলা সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনেক প্রতিষ্ঠান।

পলাতক আছেন উপজেলা পরিষদের অনেক চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। রাজশাহীর ১৪ পৌরসভার প্রায় সব মেয়রই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অনেকের দলীয় পদ-পদবিও রয়েছে। দু’একজন জন প্রতিনিধি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে তারাও দপ্তরে যাচ্ছেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর ১৪ পৌরসভার মধ্যে গোদাগাড়ীর অয়েজুদ্দিন বিশ্বাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। চিকিৎসা শেষে ১ আগস্ট ভারত থেকে ফিরলেও তিনি আর অফিসে যেতে পারেননি। ৫ আগস্ট সহিংসতা শুরু হলে অয়েজুদ্দিন বিশ্বাস আত্মগোপন করেন। তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হকও এখন পলাতক।

আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার হোসেন ছাত্র আন্দোলন শুরুর পরপরই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। তাহেরপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র শায়লা খন্দকারের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।

তার স্বামী রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের দুটি গাড়ি ও বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ই এখন আত্মগোপনে। এলাকাবাসী জানায়, গত ৩১ জুলাই থেকেই তাহেরপুর পৌরসভা তালাবদ্ধ। ভবানীগঞ্জ পৌরসভাও তালাবদ্ধ রয়েছে। মেয়র পলাতক থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কার্যালয়ে আসেন না।

এদিকে বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বাবুল হত্যার প্রধান আসামি হিসেবে আগে থেকেই পলাতক আছেন। বলতে গেলে গত জুন মাস থেকেই বাঘা পৌরসভার সেবা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ।

পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র আল মামুন খান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। পরিস্থিতির কারণে তিনিও অফিসে বসতে পারছেন না। কারণ বিএনপির আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। তবে পুঠিয়া পৌরসভার কার্যক্রম সীমিত আকারে চলছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

অন্যদিকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত গোদাগাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা বেলাল উদ্দিন সোহেলও তার অফিসে যাচ্ছেন না। তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর রশীদ হায়দার ময়নাও পলাতক। বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট অফিসে গেলেও কিছুক্ষণ পরই বের হয়ে যান।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে বাগমারা উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, পবা উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন ডাবলু ও মোহনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুল, কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদ, নওহাটা পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান পলাতক বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

এদিকে মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার কার্যালয়, রায়ঘাটি ইউনিয়ন পরিষদ আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয় ও পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা কার্যালয়, বড়গাছি ইউপি, হুজরীপাড়া ইউপি ও হরিপুর ইউপি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। রাজশাহীর ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান অফিস করছেন না হামলা ও সহিংসতার আশঙ্কায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতিমধ্যে রাজশাহীর সব পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের দ্রুত সময়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম সচল করার নির্দেশ দিয়েছি। ইতিমধ্যে সরকারি সার্ভার সচল হয়েছে। সেবা প্রার্থীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়েন সে জন্য সব জনপ্রতিনিধিকে নিজ নিজ অফিসে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।