ঢাকা | জুন ২১, ২০২৫ - ৫:৩৭ অপরাহ্ন

রাতভর নগরীর বিভিন্ন স্থাপনা পাহারায় শিক্ষার্থী-জনতা

  • আপডেট: Saturday, August 10, 2024 - 9:32 pm

স্টাফ রিপোর্টার: দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিং, লুটপাট বন্ধসহ জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে রাজশাহীতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন শিক্ষার্থী-জনতা। রাতে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষায় সঁপে দিয়েছেন নিজেদের। ঘুম হারাম করে রাতের পাহারায় রাজশাহী শহরে শিক্ষার্থীরা নিয়ে এসেছেন শান্তির সুবাতাস।

বর্তমানে ছিনতাই-লুটপাট অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। তবে রাতের বেলায় শিক্ষার্থীদের পাহারার ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম কর্মকাণ্ড নাড়া দিয়েছে। গভীর রাতে সরকারি স্থাপনা পাহারার সময় তারা নগরীর রাস্তায় ক্রিকেট খেলে অতিবাহিত করছেন।

শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজশাহী নগরী ঘুরে দেখা গেছে, রাত তখন দেড়টা। রাজশাহী শহরে দেশের একমাত্র বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সামনের সড়কে ক্রিকেট খেলছেন একদল যুবক। ব্যাট হাতে এগিয়ে এসে অয়ন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশ দ্বিতীয় বার স্বাধীন হওয়ার পর ছাত্রজনতার এ সাফল্যকে ম্লান করতে কিছু দুষ্কৃতকারী সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাসহ সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা-লুটপাট চালানোর চেষ্টা করছে। এই অপকর্মগুলো রোধকল্পে ছাত্রজনতার একটি গ্রুপ আমরা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু সব সময় তো আর বসে থাকা সম্ভব হয় না।

এ জন্য জাদুঘরের সামনের রাস্তায় গ্রুপের কয়েকজন ক্রিকেট খেলে রাত অতিবাহিত করছি। ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম ওয়াসিফ বলেন, ১৭ জুলাই ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরাই আন্দোলনকে বেগবান করতে সেদিন অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছিল। আমি চাক্ষুস প্রমাণ, আন্দোলন চলাকালে আমার ডানে-বামের অনেক ভাইয়েরা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। তাদের অনেকেই আর বেঁচে নেই। অনেক খারাপ মুহূর্ত পাড়ি দিয়ে এসে আজকের এই রাতগুলো অনেক বড় পাওয়া। আমি আন্দোলন শেষে নিজের শহরে চলে এসেছি। এই সুন্দর শহর যেন কোনো দুষ্কৃতকারীর উসকানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারে সেজন্য আমরা রাত জেগে শহরের প্রতিটি পয়েন্টে পাহারা দিচ্ছি। আনন্দ-উপভোগ করছি, খেলাধুলা করছি।

আরিফ মল্লিক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, চোর-ডাকাত ও দুষ্কৃতকারীর রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা। কয়েকদিন ধরেই আন্দোলনে ছিলাম। দেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করছে দুষ্কৃতকারীরা। এ জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘সেভ রাজশাহী’র পক্ষ থেকে আমরা আরো কয়েকদিন আন্দোলনে রাস্তায় থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

শুধু বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর এলাকাতেই নয়; কয়েকদিন ধরেই রাতে রাজশাহী শহরের শত শত পয়েন্টে ছাত্রজনতা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে রাত জেগে সরকারি স্থাপনা, সংখ্যালঘু ও বিরোধীদের বাড়িঘর এবং সংখ্যালঘুদের উপাসনাহল পাহারা দিচ্ছেন। দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিংসহ নগরবাসীর সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরলস পরিশ্রম আর রাতের ঘুম হারাম করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাহারায় হাজারো শিক্ষার্থী অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে কাজ করায় নগরবাসীর প্রশংসায় ভাসছেন তারা। অনেকেই বলছেন, শিক্ষার্থীরা রাজশাহীতে যেভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণসহ বাজার মনিটরিং কাজ করছেন তা কোন প্রশাসনের পক্ষেই সম্ভব নয়।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS