আত্মগোপনে মেয়র লিটন ও কাউন্সিলররা: সেবা থেকে বঞ্চিত নগরবাসী
স্টাফ রিপোর্টার: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলররা আত্মগোপনে থাকায় বন্ধ রয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার নাগরিক সেবা কার্যক্রম।
এতে করে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২১ জুন রাসিক নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ওই নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ২৬টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই পলাতক রয়েছেন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ প্রায় সকল কাউন্সিলর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই দিন সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরভবন পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। লুট করে নিয়ে গেছে সিটি ভবনের সবকিছুই। এমন পরিস্থিতিতে নগরভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসে কাজ করার মতো অবস্থাও নেই। যদিও লুটপাট হওয়া কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিলসহ কিছু জিনিসপত্র দুর্বৃত্তরা নগরভবনে ফেরত দিয়েছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের প্রায় সবগুলোই গত ৪ দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন এলাকায় নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নগরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, জরুরি সেবা ওয়ার্ডভিত্তিক বিভিন্ন নাগরিক সেবা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে।
নগরীর বিসিক শিল্পনগরী এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এলাকার রাস্তায় যে সড়কবাতিগুলো রয়েছে সেগুলো কয়েকদিন থেকে জ্বলছে না। একেবারে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। এমনিতেই মাঠে পুলিশ নেই তার ওপর আবার অন্ধকার। সঙ্গত কারণে এলাকায় ছিনতাই-চুরি ও লুটপাট বেড়ে গেছে।
নগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রায়হান আলী বলেন, ‘বুধবার (০৮ আগস্ট) কাউন্সিলর অফিসে জরুরি একটি কাজে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি তালাবদ্ধ। ওয়ার্ডের অনেকেই বিভিন্ন দরকারি কাজে কার্যালয়ে এসে ফিরে যাচ্ছে। এভাবে পুরো নগরীতেই নাগরিক সেবা ভেঙে পড়েছে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের পরপরই রাজশাহীসহ দেশব্যাপী বেশকিছু উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে যা কারো কাম্য নয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় যারা নাগরিক সেবা প্রদান করেন তারা এই মুহূর্তে আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে যেহেতু দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে আমি আহ্বান জানাব, যেসব নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অচল রয়েছে সেগুলো আগে জরুরি ভিত্তিতে সচল করার উদ্যোগ নেয়া।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এবিএম শরীফ উদ্দিন বলেন, নাগরিক সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে সমস্ত উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন সেটিই তো বিধ্বস্ত। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে নগরভবন পরিষ্কার করার উদ্যোগ চলছে। আশা করছি, দ্রুত সেটি আমাদের হ্যান্ডওভার করবে। এরপর আমরা আপাতত এক রুমে কয়েকজন করে বসে সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলররা হলো একটি পরিষদ বা বডি। তাদের কাজ হচ্ছে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তারপর সেটি মন্ত্রণালয়ে পাস হলে বাস্তবায়ন কিন্তু আমরাই করি। মেয়র-কাউন্সিলরদের যদি আমরা সহসাই না পাই তাহলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী কীভাবে সার্ভিস চালু রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করব। তবে জরুরি সেবাগুলো যেমন, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, রাস্তায় লাইটিং সেবা এগুলো বর্তমানেও চলমান রয়েছে।