ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ - ৩:৫২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

আমাদেরও আবু সাঈদের মত দাঁড়াতে হবে, বললেন ড. ইউনূস

  • আপডেট: Saturday, August 10, 2024 - 7:00 pm

সোনালী ডেস্ক: সবাইকে অন্যায়, গোলোযোগ ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আবু সাঈদ যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে।

শনিবার নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে তার কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন। কোথাও যেন কেউ কোনো গোলোযোগ করতে না পারে সে বিষয়েও সবাইকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তারা (শিক্ষার্থীরা) স্কুলে পড়বে আবু সাঈদের কথা। নিজে নিজে বুঝে যাবে আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব, আমিও বুক পেতে দেব। তিনি বলেন, আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। প্রত্যেক ঘরে আবু সাঈদ এবং বাংলাদেশে যত পরিবার আছে সব পরিবারের সন্তান। বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সবারই সন্তান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখানে হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক, সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়। কেউ ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা না বলে। কারণ আমরা এই মাটিরই সন্তান, সবাই আবু সাঈদ। যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছেন তার কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে, এটা আমাদের এখন কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করতে সামনে গিয়ে দাঁড়াই। আবু সাঈদ যেভাবে দাঁড়িয়েছেন আমাদেরও এভাবে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, এই আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ, যে যেখানে আছেন, আবু সাঈদের মা-বাবা, যারা আছেন তাদের রক্ষা করুন। কোনোভাবে গোলোযোগ করতে দেবেন না।

এর আগে গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে আবু সাঈদের বাড়িতে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে আবু সাঈদের বাড়ির ভেতরে যান। আবু সাঈদের বাড়ির আঙিনায় দীর্ঘ সময় বসেন এবং তার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের সান্ত্বনা দেন। আবু সাঈদের বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ সময় ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আখতার হোসেন, সারজিস আলমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুরে গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সামনের সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে গুলির মুখে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা নিরস্ত্র আবু সাঈদ। গুলির মুখে তার এই বুক পেতে দেয়ার দৃশ্য দেশে ও বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সারা দেশের ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন জোরদার করার অনুপ্রেরণা দেয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, হিন্দু পরিবার, খ্রিস্টান পরিবার, বৌদ্ধ পরিবার যত আছে বলবা, কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবা না। তারা আমার ভাই, আমরা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি, একসঙ্গে থাকব। পুরো বাংলাদেশ একটা পরিবারের মতো। এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর নাই কিন্তু। পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, এত সুন্দর পরিবার আর নাই। গতকাল শনিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

এ সময় ছাত্র-জনতাকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মাধ্যমে কিছু লোক একটা গোলমাল লাগানোর জন্য ইন্ধন যোগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পত্র-পত্রিকায় আসতেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হইতেছে।

কী জন্য তাদের নিয়ে টানাটানি করতেছে, তারা কি দেশের মানুষ না? তোমরা (শিক্ষার্থী) দেশ রক্ষা করতে পেরেছ, কয়েকটা (সংখ্যালঘু) পরিবার রক্ষা করতে পারবা না! সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার সমালোচনা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কষ্ট লাগে সেও তোমাদের সঙ্গে ছিল, তার ছেলে তোমাদের সঙ্গে ছিল।

কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখে তার বাড়ি লুটপাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, লুটপাট কারা করতেছে? কিছু ইচ্ছে করে, আর হলো অন্যের মদদে; যারা ইন্ধন যোগাইতেছে একটা গোলমাল লাগায়ে দেয়া। গোলমাল লাগাতে পারলে তাদের খুব মজা। সব সময় লেগে আছে তোমাদের আটকানোর জন্য। বলবা কেউ ছুঁতে (সংখ্যালঘুদের স্পর্শ) পারবা না, আমরা আছি।