রাজশাহীতে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা-ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার: মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজশাহীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে এই বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। টানা এই বৃষ্টিপাতের কারণে রাজশাহী মহানগরীর নিচু এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে করে স্বস্তির বৃষ্টি শহরের বিভিন্ন এলাকায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তির কারণ।
এর আগে আষাঢ় মাসেও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে রাজশাহীতে। কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির তেমন দেখা পাওয়া যায়নি।
তবে ১১ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজশাহীতে ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর এটিই ছিল এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এরপর ফের শুরু হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ।
এতে আবারও তেঁতে ওঠে রাজশাহী। দুর্বিষহ হয়ে ওঠে নগরজীবন। তবে মধ্য শ্রাবণে এসে দেখা মিলেছে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে রাজশাহী শহরের নিচু এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন পরিষ্কার না করায় বৃষ্টি ও ড্রেনের পানি উঠে এসেছে রাস্তায়। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
বিশেষ করে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার, মাস্টারপাড়া, জিরোপয়েন্ট, গণকপাড়া, লক্ষীপুর ভাটাপাড়া, উপশহর, সিএন্ডবি মোড়, মহিষবাথান উত্তরপাড়া, হড়গ্রাম এলাকা, বর্ণালির মোড়সহ অনেক নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
এতে যানবাহন এবং মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। তবে বৃষ্টি থেমে গেলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এসব এলাকার সড়কে জমে থাকা পানি নেমে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আগামী দশ দিন এভাবেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হতে পারে জানিয়ে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আনোয়ারা বেগম বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানের মত রাজশাহীতেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মূলত গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টি শুরু হয়। এরপর থেকে আজও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া আরও অন্ততঃ দশ দিন এভাবেই থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। বর্ষা মৌসুম এমন বৃষ্টি স্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রাও কিছুটা কমেছে। শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৬টায় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ এবং বিকেল ৩টায় ১০০ শতাংশ। মে মাসে তীব্র তাপপ্রবাহ কাটার পর এর আগে গত ২৬ জুন রজশাহীর সর্বোচ্চ তাপামাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টানা বৃষ্টিতে আমন চাষিদের মনে স্বস্তি: চলমান বৃষ্টিতে স্বস্তি পেয়েছেন আমন চাষিরা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে পানি না কিনেই আকাশের পানিতে জমি সেচের কাজ করতে পারছেন তারা। ফলে চাষিদের খরচ কমছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধান চাষ হয়ে থাকে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে। গত বছর আষাঢ়-শ্রাবণ পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি।
এ বছর ১২ আষাঢ়ের পর থেকেই বরেন্দ্র অঞ্চলে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ধানি জমির সেচ হচ্ছে বলে টাকা খরচা করে পানি কিনতে হচ্ছে না চাষিদের। ফলে হাসি ফুটেছে তাদের মুখে। এবার আমন চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা পূরণ হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা গণমাধ্যমকে বলেন, বৃষ্টির পানিতে এবার রোপা আমনের বীজতলা হয়েছে। জমিতে চারাও লাগানো হয়েছে বৃষ্টির পানিতে।
আগস্টের প্রায় ১৫ তারিখ পর্যন্ত রোপা আমনের চারা লাগানোর কাজ চলবে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমরা আশা করছি, রোপা আমন উৎপাদনে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে সেটা পূরণ হবে।
সোনালী/জগদীশ রবিদাস