রাসিকের সাড়ে ৯৩ কোটি টাকার সড়ক এই প্রশস্ত, এই সরু
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তুঘলকি কাণ্ড
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজশাহীর কাটাখালী থেকে তালাইমারি পর্যন্ত একটি ‘ছয় লেনের বিশ্বমানের সড়ক’ তৈরির কথা জানিয়েছিলো রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)।
নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সময় খোদ মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছিলেন, ‘আজ অত্যন্ত আনন্দের দিন। কারণ তালাইমারী মোড় থেকে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ছয় লেন সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এমন সড়ক রাজশাহীতে এই প্রথম।’ এইসব আশাজাগানিয়া বক্তৃতা যে সড়ক নিয়ে, তার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো প্রায় সাড়ে ৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবে কাজের শেষের দিকে এসে দেখা যাচ্ছে, সড়কটি কোথাও সরু হয়ে গেছে, কোথাও সরু হয়েছে নালা ও ফুটপাত। সড়ক বিভাজকও চাপানো হয়েছে কোনো কোনো জায়গায়। অযান্ত্রিক যানবাহনের লেনের তো চিহ্নও নেই।
প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের একটি এই সড়ক নির্মাণ। প্রকল্প পরিচালক রাসিক প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম জানান, বিশেষ একটি কারণে সড়কের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত করার আগেই কাজ শুরু করতে হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে এই জমি অধিগ্রহণ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে সড়কটি নিয়ে আগের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয়েছে তাদের।
তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, পরিকল্পনা ও উদ্বোধনের ঘোষণা অনুযায়ী রাস্তার সব অনুষঙ্গ না রাখতে পারলেও রাসিক এই রাস্তার নির্মাণ ব্যয় সেই সাড়ে ৯৩ কোটি টাকাই রাখছে। রাসিক প্রধান প্রকৌশলী এর কারণ হিসেবে দাবি করেন, অনুষঙ্গ কমলেও নির্মাণ ব্যয় কমার মতো সুযোগ এখানে নেই। কেননা, রাস্তার সবটা একরকম না করা গেলেও কাজের মান নিশ্চিত করার ব্যাপার রয়েছে। তিনি বলেন, আপাতত আর কিছু করার নেই। তবে কিছুদিন পর যখন আবার অধিগ্রহণ করা সম্ভব হবে, তখন এই রাস্তাটি পুরোপুরি প্রশস্ত করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে অর্থের অপচয় হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তো আপনাকে সড়ক বড় করতেই হবে। উন্নয়ন কাজে অর্থ ব্যয়কে অপচয় বলে মনে করার সুযোগ নেই। কারণ তা মানুষের জন্যই করা হয়ে থাকে।
এই রাস্তার কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক কুমারেশ দাস জানান, রাস্তার কাজটি শুরুই করা হয়েছিলো জমি অধিগ্রহণ না করে। ফলে জমি অধিগ্রহণ করতে তারা যখন ব্যর্থ হন, তখন আর এই রাস্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরির কোনো সুযোগ থাকে না। রাস্তার অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে পরিকল্পনার তুলনায় কম প্রশস্ত হওয়ার পরেও নির্মাণ খরচ কেন কমছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে কুমারেশ বলেন, সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্তের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এখন একটা বলে, পরে আরেকটা। এভাবে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। এমনও হয়েছে যে, একটা ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। পরে ওটা ভেঙে আবার করতে হয়েছে। এ কারণে এক কাজ একাধিকবার করার মতো ঘটনা এখানে ঘটেছে। যার ফলে ব্যয় কমার কোনো সুযোগ এখানে নেই।
এই সড়কের পরিকল্পনা প্রকাশ করে সিটি করপোরেশন জানিয়েছিলো, ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝখানে থাকবে ২ মিটারের সড়ক বিভাজক। সড়ক বিভাজকের দুই পাশে থাকবে ১০ দশমিক ৫ মিটারের সড়ক। সড়কের উভয় পাশে থাকবে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন এবং ৩ মিটার করে ফুটপাত ও ড্রেন। সড়কটির সৌন্দর্য বাড়াতে বৃক্ষরোপণও করা হবে।
২০২১ সালের ২০ অক্টোবর শুরু হওয়া কাজটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সরেজমিন অগ্রগতি দেখা যায়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সামনে এখনো ড্রেন ও সড়কের কাজ শেষ হয়নি। সেখানে সড়ক বিভাজকও তৈরি হয়নি। বিনোদপুর অংশ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট পর্যন্ত সড়কের প্রস্থ কমেছে। এর মধ্যে মেইন গেট থেকে কাজলা পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারের সড়কের এই অংশে উত্তর পাশের ফুটপাতও সরু হয়েছে।
কাজলা থেকে অকট্রয় মোড় পর্যন্ত সড়ক বিভাজক তিন ফুটও রাখা হয়নি। উত্তর পাশে ফুটপাত ও নালা দুই ফুটের বেশি রাখা হয়নি। তবে সড়ক বিভাজক ও ফুটপাত কমিয়েও সড়ক প্রশস্ত করা যায়নি। বিনোদপুর থেকে কাটাখালী পৌরসভার সীমানা পর্যন্তও রাস্তা অনেক জায়গা চেপে গেছে।