ঢাকা | মে ১০, ২০২৫ - ১:০৬ পূর্বাহ্ন

দুর্নীতিবাজদের খবর প্রকাশ করতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

  • আপডেট: Sunday, July 14, 2024 - 10:00 pm

সোনালী ডেস্ক: দুর্নীতিবাজদের খবর প্রকাশ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান তার সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে বলে তিনি মনে করেন না। এমনকি দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা অপরাধ করছে বা দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে সে আপন কিংবা পর বিবেচনা না করে তাদের ধরতে হবে সেটা মনে করি না। তাদের ছাড়ব না। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়া হবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বিকেলে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে গত ৮ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত তার চীন সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযান বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এটা তো চট করে হবে না। এটা দীর্ঘদিনের সমস্যা। এসব জঞ্জাল সাফ করতে হচ্ছে। এর আগে জঙ্গীবাদ ঠিক করার কথা ছিল, সেটা আমরা করেছি। জঙ্গীবাদ যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম, এখন দুর্নীতি- যেটা আমার জিরো টলারেন্স ঘোষণা আছে। আমরা ধরছি। আমরা খুঁজে বের করছি বলেই কিন্তু আপনারা জানতে পারছেন। খোঁজ না করলে তো জানা যেতো না। এভাবেই চলতো। কারণ এভাবেই চলছিল। সেই ৭৫ এর পর থেকেই এভাবে চলছে। এখন আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবেই। এখানে কোনও দ্বিধা নেই।

‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা পাবে না, তাহলে
কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’

চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না। অপরাধটা কী? নিজের জীবনবাজি রেখে, সংসার সব ফেলে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটি ভেঙে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মোকাবিলা করে যুদ্ধ করে এ দেশের বিজয় এনেছে। বিজয় এনে দিয়েছিল বলে সবাই উচ্চপদে আসীন। চীনের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ৮ থেকে ১০ জুলাই দেশটিতে দ্বিপাক্ষিক উপলক্ষে গতকাল রোববার বিকালে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

যত রাজাকারের বাচ্চারা-নাতি-পুতিরা
হলো মেধাবী, তাই না?

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধা আর কোটা এক জিনিস না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখানে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা একটা কৌশল। তার মানে হলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী না, যত রাজাকারের বাচ্চারা-নাতি-পুতিরা হলো মেধাবী, তাই না? এটা ভুলে গেলে চলবে না যাদের মেধাবী না বলছে, তাদের হাতে ওনারা পরাজিত। যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হয়েছিল রাজাকারদের বিরুদ্ধে, এই কথাটা মনে রাখা উচিত। তাদের মেধাটা কোথায়? সেটা আমার প্রশ্ন। কোটা নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেধা কার কত, সেটা পরীক্ষার প্রিলিমিনারিতে, লিখিত পরীক্ষায়, তারপর ভাইভা হয়। সেই সময় যেটাৃ সেটা বাস্তবতা তো যদি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয় সেই পাবে। আর সব সময় সব কোটা পূর্ণ হয় না। যেটা বাকি থাকে তা তালিকা থেকেই দেওয়া হয়। অনেক চাকরিতে মেধার তালিকা থেকে দেওয়া হচ্ছে। এ নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু সেখানে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা অগ্রাধিকার পাবে, এটা দিতে হবে।

আন্দোলনের পর এখন
কী অবস্থা হয়েছে?

কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন, শুধু আন্দোলন না, যে সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছিল। আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ, মানুষের ওপর আঘাত করা। দেশের জ্ঞানী-গুণী আছে, ঘরের ভেতর বসে মিথ্যা-অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিলো। এ সমস্ত দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে আমি বললাম, ঠিক আছে কোটা বাদই দিলাম। সেটার উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাদ দিলে কী হয় তা দেখা।

তিনি বলেন, এখন কী অবস্থা হয়েছে? বেশি দূর যাওয়া লাগবে না। সর্বশেষ বিসিএসে দেখেন, ফরেন সার্ভিসে দুই জন মেয়ে নিয়োগ পেয়েছে, পুলিশে চার জন। নারী অধিকারের কথা বলি। সব ধরনের ব্যবস্থা করছি। বঙ্গবন্ধু নারীদের জন্য ১০ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম যে কোটা পূর্ণ হবে না, যারা তালিকায় পরবর্তী থাকবে তাদের সেখানে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেটাই আমরা শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপরে যখন আন্দোলন শুরু হলো সব বন্ধ করলাম। বন্ধ করার পর ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের দেশের নারীরা সচিব, ডিসি, এসপি হবে কোনোদিন ভাবেনি। এমনকি কোথায়ও পদায়ন ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীতে নারী নিয়োগ দিয়েছিলাম। প্রশাসনে প্রথম সচিব আমি করি। ডিসি, এসপি, ওসিসহ সমস্ত জায়গায় নারীদের অবস্থান নিশ্চিত করেছি। অর্থনৈতিকভাবে সামনে আনার জন্য কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সেই সময় (২০১৮) যারা আন্দোলন করেছিল, সেখানে নারীও ছিল। যারা বলেছিল নারী কোটা চায় না, মেধা দিয়ে চাকরি করবো, সে কি চাকরি পেয়েছে? সে কি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে? বিসিএসের প্রিলিমিনারিতে পাস করেছে? এই বড় কথাগুলো না বলতো, কোথাও না কোথাও চাকরি করতো। দেশের সব এলাকা সমানভাবে উন্নত না। অনগ্রসর সম্প্রদায় আছে। সেসব মানুষের কি কোনো অধিকার থাকবে না? সেটা বিবেচনা করে প্রত্যেক জেলা থেকে মানুষ চাকরি পায় সেই ব্যবস্থা। কোটা বন্ধ করার পরে হিসাবটা নেন তাহলে, কোন কোন জেলা, ২৩ জেলার একটা লোকও পুলিশে চাকরি পায়নি বা প্রশাসন বা কোথাও না। ৪২ বিসিএসে বিশেষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে
কোনো ধারণা এদের নাই

কোটা বাতিলে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মামলার পরে কোর্ট যখন কোনো রায় দেয় সে বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই। সেখানে সমাধান করতে হবে। যারা আন্দোলন করছে, তারা তো আইন মানবেন না, আদালত মানবেন না, সংবিধান কি তারা চিনবেন না। বা একটা কাজ করতে হলে কার্যনির্বাহীর কাজ কী, বিধিমালা বা ধারা থাকে…। একটা সরকার কীভাবে চলে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা এদের নাই। কোনো জ্ঞানই নাই। ভালো পড়ালেখা করে, ভালো নম্বর পাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে, তাদের তো ধারণাগুলো দরকার, জানা উচিত। রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজ হয় সেটা কি তাদের জানা আছে? ধারণা তো দেখি না।

তিনি আরও বলেন, যখন আদালতে চলে গেলো, সেটার সমাধান সেখানেই হবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, বলুক। তা না…। তারা রাজপথে সমাধান করবে। আমাকে বলছে। আদালত যখন কথা বলেছে, রায় হয়ে গেছে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে আমার তো দাঁড়ানোর অধিকার নেই, সংবিধানও বলে না। সংসদও বলে না, কার্যপ্রণালি বিধিও বলে না। কিছুই না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসবে ততক্ষণ আমাদের কিছু করার থাকে না। এ বাস্তবতা তাদের মানতে হবে। না মানলে কিছুই করার নেই।

আমাদের কিছু করার নেই

রাজপথে আন্দোলন করছে, করতেই থাকবে। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ তারা শান্তিপূর্ণ করে যাচ্ছে কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এর বাইরে যখন কিছু করবে, পুলিশের গায়ে হাত তোলা, গাড়ি ভাঙচুর, আক্রমণ করতে যায়, তখন তো আইন আপন গতিতে চলবে। আমাদের কিছু করার নেই। কোটা আন্দোলন করার আগে তাদের পরীক্ষার ফলাফল দেখা উচিত ছিল যে কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে, যুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে ভালো লাগে না, গায়ে জ¦র আসে।

পাকিস্তান আমলের বাঙালিরা যে সমস্যার সম্মুখীন হতো তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েরা তো সেগুলো দেখেনি। ১৫-২০ বছর আগের কী অবস্থা ছিল সেটাও সকলে জানে না। বিএনপির আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রবাজি-সেশনজট, দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের ছিল না। আজ সকলের হাতে মোবাইল ফোন। সকলে ফটাফট সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগ করে আন্দোলন করে। এ মোবাইল ফোন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে কার হাতে ছিল? মোবাইল বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত আওয়ামী লীগ। অনগ্রসরদের সুবিধা দেওয়ার কথা সংবিধানে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কি সংবিধানটা পড়ে দেখছে কখনও? আর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? মুক্তিযোদ্ধারা জীবনে কষ্ট করেছে।

পঁচাত্তরের পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের পরিচয় দিত না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনা সবকিছু মুছে ফেলা হয়েছিল। মনে হয়েছিল পাকিস্তানিদের প্রদেশ হয়ে গেছি আমরা। সেইখান থেকে বাংলাদেশ ফিরে এসেছে। জয়বাংলা ফিরে এসেছে। সাতই মার্চের ভাষণ ফিরে এসেছে। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলে ভালো লাগে না! মানে গায়ে জ¦র আসে! বড় অদ্ভুত লাগে আমার মুক্তিযোদ্ধার নাতনি, সে ভর্তি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। উনি বলেন কোটা থাকবে না। ব্যাটা তুই তাহলে চলে আয়, পড়াশোনার দরকার নেই। তুই মুক্তিযোদ্ধার নাতি হিসাবে কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এখন বলে কোটা লাগবে না। তোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া উচিত। কোটা নেই তোর পড়াও নেই, বাড়ি যেয়ে বসে থাকা উচিত। যদি লজ্জা থাকতো তাহলে আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়ে বলুক যে কোটা লাগবে না। বিচিত্র এ দেশ। অবশ্যই আমাদের দেশটা বিচিত্র। বিচিত্র মানসিকতা। ছয় ঋতুর দেশ তো, ঋতুও বদলায় বোধও বদলায়।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS