াকা | এপ্রিল ২, ২০২৫ - ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে

  • আপডেট: Friday, July 12, 2024 - 7:00 pm

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, খবরের কাগজের তথ্য অনুযায়ী; রাজশাহীর যে সকল নেতারা হাজার-হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করে হুন্ডির মাধ্যমে তা বিদেশে পাচার করেছে, বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে যারা সরকারের টাকা আত্মসাত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে খুব দ্রুত সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শুক্রবার বিকালে রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। শহরের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় রাজশাহীর সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা তুলে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, গত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে যে তীব্র দ্বন্দ তৈরী হয়েছে, তা নিয়ে দলটির ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মারাত্মকভাবে হতাশ। বাঘায় সম্প্রতি একজন নেতা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য দলের আরেক ‘বড় নেতাকে’ ওই হত্যাকাণ্ডের ‘মদতদাতা’ হিসেবে অ্যাখায়িত করেছেন। এটি তিনি গোপনে নয়, বরং প্রকাশ্যেই মাইকে ঘোষাণা করে বলেছেন। যাদের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে; তাদের যদি সৎ সাহস থাকতো, তাহলে এর বিরুদ্ধে মামলা করা যেত। কিন্তু মামলা করা হয়নি। তাহলে বোঝাই যায়, এটি পরোক্ষভাবে দুর্বলতার প্রকাশ।

আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক ত্যাগী এবং সৎ নেতাকর্মী আছে। সম্প্রতি কয়েকদিন আগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে, কিন্তু একজন ত্যাগী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতার ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি। অনেক সাধারণ মানুষও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়। কিন্তু ওই ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতা ঢাকার টিবি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলেন। বাস্তবতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, আর ত্যাগী ও আদর্শিক নেতারা অসহায়ের মতো জীবন যাপন করছেন। যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে, রাজশাহীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলবে।

ওয়ার্কার্স পার্টি ঘোষিত পাঁচ দফা কর্মসূচি তুলে ধরে জাতীয় এই রাজনীতিক বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, তা সাধারণ মানুষকে অসহায় করে ফেলেছে। এর বিরুদ্ধে আমরা কথা বলছি, বলতেই থাকবো। সাধারণ মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যাতে সব ধরনের মানুষ, নায্য দামে খাবার কিতে জীবন কাটাতে পারে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলে, বাংলাদেশ হবে সমাভিত্তিক সমাজ। কিন্তু এখন কি দাঁড়িয়েছে? এক শ্রেণি ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে; আরেক শ্রেণি কুড়ে ঘরে জীবন কাটাচ্ছে। আমরা কোন পথে হাটবো, তা ঠিক করতে হবে। আমরা কি বঙ্গবন্ধুর পথে যাবো, নাকি দুর্নীতিবাজদের পথে হাটবো? আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি; সেই বাংলাদেশে টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজদের কোন স্থান নেই। একটি দেশ তৈরীর জন্য যদি ত্রিশ লাখ মানুষ জীবন দিতে পারে, তাহলে সেই দেশকে রক্ষা করতে আমরা আবারও জীবন দিতে প্রস্তুত।

সভায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে রাকসুর সাবেক এই ভিপি বলে, দুর্নীতি দমন কমিশন চোখে দেখতে পায় না। এরা অন্ধ! খবরের কাগজে উঠে আসছে, একজন ব্যক্তি দুর্নীতি করে টাকা পাচার করছে। সেই ব্যক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনের পাশ দিয়ে দিব্বি গাড়ি চালিয়ে চলে যাচ্ছে। তাহলে এই কমিশন দিয়ে আমাদের দুর্নীতি দমন হবে? আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছি, দুর্নীতি রুখতে একটি বিশেষ কমিশন করেন। যে কমিশন দুর্নীতিবাজদের ধরে গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশন যদি তদন্ত করে রাজশাহীর দুর্নীতিবাজদের ধরতে পারে, তাহলে পরদিন সকালে দেখা যাবে; শহরের প্রতিটি বাড়িতে মিলাত হচ্ছে। তারা শান্তি পাবে এই ভেবে, অবশেষে চোরগুলো সব ধরা পড়েছে।

বাদশা বলেরন, কার কতো সাহস আছে আমরা জানি। খবরের কাগজের খবর দেখে অনেকের মুখ শুকিয়ে গেছে। বাড়ির সামনে দিয়ে পুলিশ নয়, যদি চোকিদারও হাঁটাহাটি করে, তবে তারা চকির তলে লুকিয়ে যাবে। আর যদি বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল যায়, তাহলে তারা রাজশাহী ছেড়েই পালিয়ে যাবে। ওয়ার্কার্স পার্টি যেন সেই মিছিল করতে পারে; সেভাবেই আমাদের সুসংগঠিত হতে হবে।

সভায় কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন বাদশা। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে ছাত্ররা একটি আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমি ছাত্রদের বলতে চাই, কোথায় তোমরা কোটাবিরোধী আন্দেলন করছো? দেশ বাঁচাতে তোমরা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছো না কেন? আমি কোটাবিরোধী কিছু যুক্তির সঙ্গে একমত। যেমন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি, পোতা সবাই কোটা নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নেবে, এটি ন্যয় সঙ্গত নয়। কিন্তু আমি মনে করি, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এসব বিষয়ে অনেক বক্তব্য আছে। তাদের সেই বক্তব্য কখনও শোনা হয় না। মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা। সুতরাং এ বিষয়ে সরকারকেই রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোটার বিষয়ে কেন সরকার সিদ্ধান্ত না নিয়ে বলছে, আদালত সিদ্ধান্ত নেবে। আদালত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কিন্তু এই বিষয়টির বাস্তবতা এমনই, যেখানে সরকারের সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন বিকল্প নেই।

সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু। বক্তব্য দেন জেলা সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, মহানগর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সাদরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবু সাহিদ, সিরাজুর রহমান খান, আব্দুল মতিন, নাজমুল করিম অপু, মনির উদ্দিন পান্না, মনিরুজ্জামান মনির, মহানগর সদস্য সীতানাথ বনিক, আব্দুল খালেক বকুল, মাসুম আক্তার অনিক, আলী আফতাব তপন, রিয়াজ আহমেদ তুর্কি, শাহিনুর বেগম, আলমগীর হোসেন আলম, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমতিয়াজ, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী মহানগর সহ সভাপতি অমিত সরকার, কাশিয়াডাঙা থানার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বাবলু, চন্দ্রিমা থানা সভাপতি শাহেদ হোসেন শিশির, সাধারণ সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন জাহিদ, শাহ মখদুম থানার সভাপতি ইসমাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রেজা, বোয়ালিয়া পশ্চিম সাধারণ সম্পাদক শাহিন শেখ।

সোনালী/জেআর

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS